সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় ৭ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের সাথে জড়িত সকল আসামীদের গ্রেফতার ও মামলার তদন্তকাজ যেনো কোনভাবেই প্রভাবিত না হয় সে ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা সিলেট পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
বরাবর,
পুলিশ সুপার,
সিলেট জেলা, সিলেট।
শুভেচ্ছা নেবেন, যদিও শুভেচ্ছা নেয়া বা দেয়ার মতো পরিস্থিতি আমাদের নেই। কারণ আজ এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি যেখানে সর্বত্র ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন এবং হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। অনেকক্ষেত্রে অপরাধীরা সাজা পেলেও বেশিরভাগ জায়গাতেই অপরাধীরা পাড় পেয়ে যাচ্ছে। এখানে বিচারবিভাগ এবং ভিক্টিমের মাঝে তদন্ত কাজে নিয়োজিত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটা ভূমিকা থাকে। যেসব ক্ষেত্রে তদন্ত কাজের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয় সেখানেই ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্থ হয়। এবার আসবো একটু বিস্তারিত ঘটনায়।
আজকে ভয়াবহ একটি সমস্যাকে কেন্দ্র করেই আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। একটি পরিবারের অসহায়ত্বের বিষয় নিয়ে আমরা আপনার দ্বারস্থ হয়েছি, সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায় গণধর্ষণ এর শিকার এক সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থীর বাবার আর্তনাদ নিয়ে আপনার কাছে হাজির হয়েছি, ন্যায়বিচারের দাবী নিয়ে আপনার কাছে আজ এসেছি। আপনি হয়তো অবগত আছেন, গত ২২ নভেম্বর সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেয়াওনবাজার ইউনিয়নের শিউরখাল গ্রামের ৭ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী ছয়জন ধর্ষক দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন। গণধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর মামলা নং ০৮/২০১৮, সিলেট জজ কোড জি আর নং ৬৯/২০১৮ । ভিক্টিম শিক্ষার্থী ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় তার ঘরে থেকে চাচার ঘরে যায় এবং তার মা’কে বলে খাবার হলে ডাক দিতে। খাবার তৈরি হলে যখন তার মা ডাকতে যায় তখন জানতে পারে আরো আগেই তো সে চলে গিয়েছে। সাথে সাথেই শুরু হয় মেয়েকে খোঁজা। অবশেষে ভয়াবহ রক্তাক্ত অবস্থায় নিজ মেয়েকে বাড়ীর পাশেই এক পরিত্যক্ত ঘরে খুঁজে পায় তার পরিবার। ভিক্টিমের বাবা তখন দিশেহারা অবস্থায় মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে কে এসব করেছে? কিন্তু মেয়ে বলতে চায়না কারণ যদি বলে তবে নাকি তার বাবাকে হত্যা করবে ধর্ষকরা এই হুমকিও মেয়েকে দিয়েছে। কিন্তু বাবা অভয় দেবার পর সে বলে যে সন্ধ্যার দিকে তার পাশের ঘরের কাকার বাড়ি থেকে যখন নিজের রুমে ফিরছিলেন তখন কয়েকজন তার মুখ চেপে ধরে নিয়ে যায় এবং তার উপর এই নৃশংস হামলা চালানো হয়। দুজনকে সে চিনতে পেরেছে বলেও জানায় । একজন স্থানীয় মাতাব্বর করিমের ছেলে আহাদ ও আরেকজন আজই। সে রাতেই ভিক্টিমকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয় এবং অপরাধীদের নামে মামলা করা হয়। মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় এবং দুজন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আরো দুজনকে গ্রেফতার করলেও এখনো আরো দুই অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়নি। ভিক্টিমের পরিবারের দাবি, প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অপরাধীদের ধরতে তালবাহানা করে প্রশাসন, পরে গ্রেফতার করলেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির বিষয়টি নিয়ে সন্তোষজনক কোন সমাধান পায়নি পরিবার। রিমান্ডে নেয়া হলেও সেখানে প্রশাসন তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের কারণেই স্বীকারোকিমূলক জবানবন্দী নেয়া যায়নি বলে পরিবারের অভিযোগ। তাদের দাবি, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি অংশ প্রত্যক্ষভাবে ধর্ষকদের সহায়তা করছে। মামলাটি বর্তমানে স্থানীয় থানাতে নেই, ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ফাইনাল চার্জশিটের অপেক্ষায় আছে এই মামলা। কিন্তু ভিক্টিমের পরিবারের ধারণা মামলা প্রভাবিত হচ্ছে। আর তাই যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীজোট মনে করছে তাদের পাশে দাঁড়ানো অতীব জরুরি।
নির্যাতিত পরিবারের পক্ষ থেকে যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীজোট নিম্নোক্ত দাবীসমূহ উপস্থাপন করছে।
১। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল আসামীদের গ্রেফতার।
২। মামলার তদন্ত কাজ এখন যেহেতু সিলেট ডিবি অফিসে আছে তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার চার্জশিট প্রদান করা।
৩। গণধর্ষণের শিকার হওয়া শিক্ষার্থী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা প্রদান।
আমরা আশা রাখছি, আমাদের দাবীসমূহের প্রতি যথাযথ দৃষ্টি দিয়ে খুব শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে নির্যাতনের শিকার পরিবারকে ন্যায়বিচার প্রদানে সহায়তা করবেন। নির্যাতিত মানুষের জয় হবেই- জয় বাংলা।
শিবলী হাসান,
আহবায়ক, যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীজোট।
যোগাযোগ- ০১৯১৬ ৬২৫৫৩২