সুনামগঞ্জের তাহেরপুরে এক হাজং আদিবাসী নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিলম্ব মেডিকেল পরীক্ষা এবং ফলশ্রুতিতে নেগেটিভ ফলাফল আসার প্রেক্ষাপটে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ভূমিকায় উদ্বেগ জানিয়েছে হাজং আদিবাসীদের দু’টি সংগঠন।

 

০৫ সেপ্টেম্বর রবিবার বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠন ও বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এই উদ্বেগ জানানো হয়। এছাড়া এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারও দাবি করেছে সংগঠন দু’টি।

ঘটনা সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে ১৪ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে। ঐদিন খুব সকালে হাজং কিশোরীটি বাড়ির পার্শ্ববর্তী ছোট ছড়াতে গোসল করতে যায়। তিনি সেখানে মাথায় সাবান লাগিয়ে স্নানের কাজে মগ্ন ছিলেন। এসময় উৎপেতে থাকা অভিযুক্ত আব্দুল রাশিদ তার কাছ থেকে সাবান নেওয়ার ভান করে কাছে এসে জোড়পূর্বক ধরে কিশোরীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং ধর্ষণ করে। হাজং কিশোরীটি এসময় বাঁচার জন্য চিৎকার ও ছুটাছুটির চেষ্টা করলে ধর্ষক তাকে আঘাত করে ও পড়নের কাপড় ছিঁড়ে জোর জবরদস্তি করে এই শ্লীলতাহানিকর কাজটি করে। ঐ সময় প্রবল বৃষ্টি থাকার কারণে ভিকটিমের চিৎকার আশেপাশে বাড়ির লোকজন কিছু শুনতে পায়নি বলেও জানানো হয়।

সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো ঐ বিবৃতিতে বলা হয় যে, গত ১৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর থানাধীন সীমান্তবর্তী রাজাই গ্রামে উক্ত হাজং আদিবাসী তরুণী (২৩) ঐ গ্রামের আব্দুল রাশিদ (৪৫), পিতার নাম পিতা আবুল কালাম কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন। ঐ দিনই এ ধর্ষণ ঘটনায় ভিকটিমের মায়ের অভিযোগে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা হয়। দাযেরকৃত মামলা নং ১২, তারিখ ১৪/০৮/২০২১ খ্রি: ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯ (১)। এই মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে আছেন তাহিরপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) আবু বকর সিদ্দিক ।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ঘটনার পরদিন ১৫ আগস্ট দুপুরের মধ্যে সুনামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে ভিকটিমের মেডিক্যাল পরীক্ষা করায় থানা কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার ১৬ দিন পর গত ১ সেপ্টেম্বর থানা থেকে জানা যায়, ধর্ষণের মেডিক্যাল পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে অর্থাৎ উক্ত পরীক্ষার ফলাফল অনুসারে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। কিন্তু আদিবাসী নারীর প্রতি ধর্ষণের এ সত্য ঘটনায় এরকম নেগেটিভ ফলাফল শুনে ভিকটিম ও তার পরিবার সকলেই অত্যন্ত হতবাক হয়েছেন বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।

জাতীয় হাজং সংগঠন ও বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন উক্ত মেডিক্যাল পরীক্ষার ফলকে ভুল ও সন্দেহজনক বলে মনে করে চারটি কারণের কথা ও উল্লেখ করে এবং একইসাথে এই ফলাফল প্রত্যাখানও করছে। আমরা বারংবার ভিকটিম ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে, ধর্ষণের ঘটনাটি সত্য ছিল বলে দাবি করে সংগঠন দু’টি।

বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠন এর সাধারণ সম্পাদক পল্টন হাজং এবং বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন এর সাধারণ সম্পাদক আশীষ হাজং স্বাক্ষরিত উক্ত বিবৃতিতে সংগঠন দু’টি নিম্নোক্ত দাবিগুলো উত্থাপন করে-

১. সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার আদিবাসী তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষায় কোন অবহেলা ও ফলাফলে প্ররোচনা হয়ে থাকলে তা খুঁজে বের করা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।
২. আদিবাসী নারীর প্রতি ধর্ষণ ঘটনার সম্পৃক্ত অভিযুক্ত আসামী আব্দুল রাশিদকে রক্ষার কোন ষড়যন্ত্র চলতে থাকলে তা শক্তভাবে প্রতিহত করা।
৩. ঘটনাটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত আসামীকে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
৪. দরিদ্র, অসহায় ও অসচেতন এই ক্ষতিগ্রস্ত ভিকটিম ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৫. ক্ষতিগ্রস্ত নারীর মানসিক অবস্থা জোরদার করণের জন্যে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং মামলা পরিচালনায় আইনী সহায়তা প্রদান করা।

আইপি নিউজ

মন্তব্য করুন