সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি বাড়ি দখল করাকে কেন্দ্র করে শরণখোলা উপজেলার লাকুরতলা গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সন্ত্রাসীচক্র দখল করা ঐ বাড়িতে ঘর তৈরি অব্যাহত রেখেছে। এলাকাবাসী জানায়, নারায়ণ চন্দ্র তাফালী ও পুলিন চন্দ্র তাফালী দীর্ঘদিন ধরে ঐ বাড়িতে বসবাস এবং বাড়ির এক একর জমি বাগানবাড়ি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। গত ২২ জানুয়ারি বিএনপি কর্মী হিসেবে পরিচিত উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামের শাহ আলম ১০-১২ জন ভাড়া করা লোক নিয়ে বাগানবাড়িটি দখল করে নিয়ে সেখানে একটি পুকুর কাটে ও একটি ঘর তোলা শুরু করে। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে এসআই মাহবুব আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে দখলদারদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করতে বলেন এবং পুনরায় ঘর তুলতে নিষেধ করেন। কিন্তু শাহ আলম পরদিন ২৩ জানুয়ারি বাঁশ-খুঁটি নিয়ে পুনরায় সেখানে ঘর তুলতে যায়। বাঁধা দিতে সাহস পায়নি বাড়ির লোকজন। দখল করা জায়গায় নির্মাণাধীন ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নারায়ণ চন্দ্রের মা বলেন, ‘৭১ সালে লুট হয়েছে ঘরের মালামাল। এখন দেখছি বাড়ি-জমি, সবই দখল হচ্ছে। ভগবান কি নেই?’ লাকুরতলা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সুভাষ চন্দ্র (৫০) এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন, আমার বুঝজ্ঞান হওয়ার বয়স থেকেই দেখে আসছি তাফালী পরিবারের লোকজনই এই বাড়ি-জমি ভোগ দখল করে আসছেন। অন্যদিকে শাহ আলমের বোন খাদিজা বেগম জানালেন, তার বাবা জীবিত থাকাকালে ঐ জমি প্রমথ অধিকারী ও মন্মথ অধিকারীর কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্র জানায়, উক্ত জমি নিয়ে ইতিপূর্বে দায়ের করা দেওয়ানি মামলার (নং ২২/৯২) রায় হয়েছে ১৯৯৬ সালের ২৯ জুন এবং তা নারায়ণ চন্দ্র ও পুলিন চন্দ্রদের পক্ষে গেছে। শরণখোলা থানার এস আই মাহবুব আলমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি শুনে আমি নিজেই ঘটনাস্থলে যাই এবং দুপক্ষকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেই। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে স্থানীয় সংখ্যালঘুরা এমনিতেই ভীতসন্ত্রস্ত। তার পর চলছে এভাবে জবর দখল। ফলে গ্রামে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা।
ভোরের কাগজ, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০২