নওগাঁ শহরের ব্যস্ততম চাল আড়তদার পট্টিতে প্রভাবশালী এক হাজীর নির্দেশে তার পুত্র ও ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা মন্দিরে যাতায়াতের রাস্তাসহ সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীর দোকানঘর দখল করে নিয়েছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীর মালামাল ২টি ট্রাকে তুলে লুট করে নিয়ে যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে এ ঘটনা ঘটলেও দীর্ঘ ২৭ দিনে নওগাঁ সদর থানা মামলা নেয়নি। ওই ঘটনার পর থেকে প্রভাবশালী ওই হাজী ও তার সহযাগীদের অব্যাহত হুমকি-ধামকিতে সম্পূর্ণরূপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে সংখ্যালঘু ওই পরিবারের সদস্যরা। সরজমিনে জানা যায়, গত ২৫ মে বেলা ২টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে পরপর দু’দফায় হামলা চালিয়ে চাল আড়তদার পট্টির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হাজী খন্দকার মনছুর আলী, তার ৪ পুত্র ও ভাড়া করা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একযোগে হামলা চালিয়ে সংখ্যালঘু ব্যবসায়ী শ্যামসুন্দর সাহার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা শ্যামসুন্দর সাহার ২টি দোকানঘরের মধ্যে বন্ধ ঘরের তালা ভেঙে দোকানের মধ্যে রক্ষিত প্রায় সোয়া দু’লাখ টাকার আতব চাল, ভূষি, সরিষার তৈল, রড, সিমেন্ট ২টি ট্রাকে (ঢাকা-ন-৫২৬৫, বগুড়া-ট-০২-০৪৩৪) তুলে লুট করে নিয়ে যায় এবং দোকানঘর জোরপূর্বক দখল করে তালা মেরে দেয়। ওই দোকানঘরের পাশ দিয়ে পাশ্ববর্তী মন্দিরে যাতায়াত করার একমাত্র রাস্তাও এ সময় সন্ত্রাসীরা দখল করে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে নওগাঁ সদর থানা পুলিশকে জানালেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ অদ্যবধি ঘটনাস্থলে আসেনি। বৃদ্ধ শ্যামসুন্দর সাহা এ ব্যাপারে বারবার থানায় মামলা করতে গেলেও গত ২৭ দিনেও থানা তার মামলা নেয়নি। এ ঘটনার পর ওই এলাকার সংখ্যালঘু হিন্দু ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী জানায়, আড়তদার পট্টির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হাজী খন্দকার মুনছুর আলী একটি মার্কেট নির্মাণ করার জন্য চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু মার্কেট করার জন্য যে পরিমাণ জমি প্রয়োজন তা না থাকায় শ্যামসুন্দর সাহাকে তার দোকানঘর মুনছুর আলীর কাছে বিক্রি করতে বলে। এতে শ্যামসুন্দর সাহা রাজি না হলে গত ৬/৭ মাস যাবত তার দোকানঘর দখল করার হুমকি দিয়ে আসছিল। বৃদ্ধ শ্যামসুন্দর হাজীর ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ২৫ মে তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালামাল লুট করে ঘর দখল করে ওই সন্ত্রাসী বাহিনী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী ‘সংবাদ’কে জানান হাজী মুনছুর আলী দীর্ঘদিন যাবত ওই সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীর দোকানঘর দখল করার চেষ্টা করে আসছিল। বর্তমানে ওই হাজীর অত্যাচারে হিন্দু ব্যবসায়ীদের কোন নিরাপত্তা নেই। প্রকাশ্যে দিবালোকে ট্রাক ভিড়িয়ে মালামাল লুট করে দোকান ঘরদখল ও মন্দিরের রাস্তা দখল ঘটনার পর ওই এলাকার অন্য সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীরা চরম আতঙ্কিত। ওই হাজী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রকাশ্য হুমকি-ধামকিতে বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে সংখ্যালঘু ওই পরিবার।
সংবাদ, ২২ জুন ২০০২