নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার নামে শিশুদের নিয়ে চাঁদা তোলার অভিযোগে মাদ্রাসার শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির সদস্যসহ ছয় জনকে আটক করেছে এলাকাবাসী। এ সময় তাদের কাছে বন্দি থাকা অবস্থায় পাঁচ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।

 

১৭ জুন রাতে শহরের দক্ষিণ মাসদাইর এলাকার একটি বাসা থেকে শিশুদের উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এলাকাবাসী ওই ছয় ব্যক্তিকে আটক করে।

উদ্ধারকৃত শিশুরা হলো- নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে রায়হান (৮), রংপুর তারাগঞ্জ এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে ফরিদ ইসলাম (৭), একই এলাকার দবির উদ্দিনের ছেলে আরিফ ইসলাম (১০), হামিদুল ইসলামের ছেলে রায়হান (১২) ও সাইদুর রহমানের ছেলে রেজওয়ান ইসলাম (১০)।

আটককৃতরা হলেন- বরিশাল দশমিনা এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে ও পশ্চিম দেওভোগ জান্নাতুল বাকি নূরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার কোষাধ্যক্ষ কাউসার আহমেদ (৩৫)। একই মাদ্রাসার শিক্ষক রিয়াজুল ইসলাম (৩০)।

সে পটুয়াখালী বাউফল এলাকার ইছহাক হাওলাদারের ছেলে এবং রংপুর ধোলাইখাল এলাকার মুহাম্মদ আলীর ছেলে আফসারুল ইসলাম (৫৫)।

অন্যরা হলো, রংপুর তারাগঞ্জ এলাকার ফজুলল হকের ছেলে ইউসুফ (১৮), একই এলাকার শেরাতুনের ছেলে বাবু (১৮) ও আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. আতিক হাসান (১৮)।

উদ্ধারকৃত শিশুদের বরাতে স্থানীয় বাসিন্দা মো. রোমান ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চার থেকে পাঁচ দিন আগে রংপুর, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আট থেকে ১২ বছরের আট জন শিশুকে মাদ্রাসায় পড়ানোর কথা বলে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসে আটককৃতরা। এরপর বিভিন্ন মাদ্রাসার নামে চাঁদা তোলার জন্য রসিদ বই দিয়ে তাদের রাস্তায় বের করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে প্রত্যেককে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা চাঁদা তোলার জন্য বলা হয়।

এদিকে, গতকাল দুপুরের মধ্যে রায়হান ও রেজওয়ান ৫০০ টাকা চাঁদা তুলতে না পারায় তাদের মারধর করে বাইরে থেকে তালা দিয়ে ঘরের ভিতরে আটকে রাখা হয়। পরে জানালা ভেঙে বাইরে এসে কান্না শুরু করে দুজন। এলাকাবাসী কান্নার কারণ জানতে চাইলে তারা ঘটনার বিস্তারিত খুলে বলে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মাসদাইরের বেশ কয়েকজন যুবকের সহযোগিতায় আরও তিন শিশুকে ওই ঘর থেকে উদ্ধার এবং ছয় জনকে আটক করা হয়।

শিশুদের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, আটককৃত কাউসার আহমেদ, রিয়াজুল ইসলাম ও আফসারুল ইসলাম মূলত বিভিন্ন জেলা থেকে শিশুদের পরিবারের সদস্যদের প্রলোভন ও মাদ্রাসায় পড়ানোর কথা বলে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসে। তারপর ইউসুফ, বাবু ও আতিক হাসান মিলে মারধর করে শিশুদের চাঁদা তুলতে বাধ্য করে।

এনায়েত নগর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য রোজিনা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারাও তাদের দেখা পেতো না। চার থেকে পাঁচ দিন আগে তারা বাসা ভাড়া নিয়েছে বলে জানিয়েছে। সবসময় বাসায় তালা দেওয়া থাকতো। রাত হলে মাদ্রাসার লোকজন আসতো। কিন্তু, তারা আসলে কী কাজ করতো সেটা কেউ জানতো না। আজকে যখন শিশুরা কান্না করছিলো তখনই বিষয়টি জানতে পারে সবাই।”

তিনি আরও বলেন, “ভুয়া মাদ্রাসার নামে শিশুদের দিয়ে চাঁদা তুলে ওই প্রতারকরা। তারা শিশুদের ঠিকমতো খাবারও দেয় না। চাঁদা না তুললে তাদের মারধর করে বাসায় আটকে রাখে। এই প্রতারক চক্রের ছয় জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে আটক অবস্থায় পাঁচ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় জানানো হয়েছে।”

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পাঁচ শিশুকে উদ্ধার ও ছয় জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। শিশুদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আটককৃতদের বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ডেইলি স্টার

মন্তব্য করুন