রাজশাহীর নির্বাচনী এলাকা-৪-এর অধীন পুঠিয়া উপজেলার সর্বত্রই নির্বাচন পরবর্তীকালে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। পরিস্থিতি এতই উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে, সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে যেতেও ভয় করছেন। অভিযোগ রয়েছে, পুঠিয়াতে প্রতিপক্ষের ওপর বিএনপি সমর্থকদের লাগামহীন নির্যাতন-সন্ত্রাস, লুটপাট ছাড়াও খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, অপহরণ এখন মামুলি ব্যাপার। পুলিশ প্রশাসন নির্যাতিত-বিপন্ন মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে উলটো তাদেরকেই শায়েস্তা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মামলা করা হচ্ছে নির্যাতিতদেরই বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে গেছে ‘জনগণের বন্ধু’ বলে কথিত পুলিশ প্রশাসনের ওপর থেকে। নৌকা মার্কার সমর্থকরা বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছেন না ক্ষমতাসীনদের অত্যাচার-চাঁদাবাজির কারণে। মুসলমান সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের দিনেও নিজ বাড়িতে আসতে পারেননি কয়েক হাজার আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক এই তথ্য জানিয়েছেন। প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, গত ২৭শে অক্টোবর সন্ধ্যায় ঝলমলিয়া বাজারে আওয়ামী লীগ কর্মী হাজী সিরাজুল হকের দোকানে হামলা চালানো হয়। বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসীরা সোয়া লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। তারা মনজুরুল হক মিল্লাতকে পিস্তল ঠেকিয়ে গলার স্বর্ণের চেইন, হাত ঘড়ি ছিনিয়ে নেয় এবং মারধর করে রড-লাঠি দিয়ে। মিল্লাত পুঠিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদের ভাই। পুলিশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করলেও একটি ‘মিথ্যা’ মামলায় ছাত্রলীগ নেতা মাসুদকে গ্রেফতার করে। গত ১২ই অক্টোবর সাতবাড়িয়ার বৈস্বপাড়ায় কালীমন্দির ভাঙচুর করা হয়। একই দিনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুকের ওপর হামলা চালায় বিএনপি সমর্থকরা। সন্ত্রাসীরা তার পিজ গাড়িটির ব্যাপক ভাঙচুর ও ডায়রিসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট এবং চালক দুলালকে মারাত্মক জখম করে। সূত্র জানায়, ১৬ নবেম্বর সন্ধ্যায় মাহেন্দ্রায় নিমর্মভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আতাবুলকে (৪০) ২৯ অক্টোবর সরগাছি গ্রামের ফজলুর রহমানকে হত্যা করা হয়। ২৬ নবেম্বর সাতবাড়িয়া জগপাড়াতে আখ ক্ষেত থেকে এক ব্যক্তির কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। ২২ নবেম্বর শিবপুরহাটের ১৫ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। ১৩ অক্টোবর হাতিনাদা গ্রামে ঘটে আরেকটি ধর্ষণ। ২২ নবেম্বর পুঠিয়া-তাহেরপুর সড়কের বাসুপাড়া নামক স্থানে পুলক সাহার লক্ষাধিক টাকার কাপড় ছিনতাই হয়। তিনি একজন বড় কাপড় ব্যবসায়ী। ২৯ অক্টোবর পার্বতী রানীর গলার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ২২ অক্টোবর রাজশাহী-নাটোর সড়কের গোপালহাটি নামক স্থানে এক মাছ ব্যবসায়ির টাকা ছিনতাই হয়েছে। সূত্র মতে, গত ২০ অক্টোবর ছোটসেনবাগ গ্রামের সাজেদা বেগমের স্বামীকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা সাজেদা বেগমের কাছে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ১৫ অক্টোবর নন্দনপুর বাজারে আওয়ামী সমর্থক ২০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ২২ নবেম্বর বিড়ালদহ মাইপাড়া বাজারে রবি ঠাকুরের দোকান লুট করে দুর্বৃত্তরা। ৩০ নবেম্বর পুঠিয়া সদরে বিবি হাওয়ার বাড়িতে ডাকাতবেশে হামলা চালায় একদল সন্ত্রাসী। এই হামলায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়। এছাড়া লুট করা হয় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা। সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর ভোরে বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসীরা ছাত্রলীগ নেতা আরমানের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে গোটা বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সর্বমোট প্রায় দু’লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, নির্বাচনের পর নন্দনপুরের বিএনপি কর্মী ইদু, হাবু, ফজলু ও সিরাজুল ছাত্রলীগ নেতা আরমানের কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে আরমানকে মারধর করা হয়। এছাড়া সন্ত্রাসীরা আরমানের বাড়ি থেকে একটি গরু লুট করে নিয়ে যায়। স্থানীয় বিএনপি নেতারা গরুটি ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এই গরুটি আরমানের বাবা আওয়ামী লীগ সমর্থক গোলাম মোস্তফা মাত্র ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এতে বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আরমানের নামে ‘হয়রানিমূলক’ একটি মামলা দায়ের করলে সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা আরমানের বাবার কাছ থেকে গরু বিক্রি পুরো টাকা নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। টাকা না দিলে ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে গত ২১ ডিসেম্বর সত্যি সত্যিই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। ইউনিয়ন পর্যায়ের ছাত্রলীগ নেতা আরমানের কলেজে পড়ার বইপত্র সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সংবাদ, ২৯ ডিসেম্বর ২০০১