পুরাতন ঢাকার শনিদেব মন্দিরে কালী মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত কামালকে গতকাল আবার ৫ দিনের পুলিশরিমান্ডে আনা হয়েছে। এটা তার দ্বিতীয় দফা রিমান্ড। তবে গতকাল পর্যন্ত পুলিশ তার কাছ থেকে তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করতে পারেনি। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কামাল বলেছে, মাটির তৈরি মূর্তির বিরুদ্ধে সে জেহাদ ঘোষণা করেছে। গায়েবী আওয়াজে সে এই জেহাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পুলিশ তার কথাবার্তাকে অসংলগ্ন বলে মনে করেছে। বুধবার রাতে ডিসি দক্ষিণ শহীদুল ইসলাম ও গতকাল সকালে এডিসি (দক্ষিণ) আব্দুল মান্নান জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাকে মূর্তি ভাংচুর করার জন্য কেউ নির্দেশ দিয়েছে কি না তাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। পুলিশ রিমান্ডে কামাল নিজেই মন্দিরে ঢুকে কালী মূর্তি ভাংচুরের কথা স্বীকার করে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছে, কামালসহ আরও ২ যুবক মন্দিরে এসেছিল। কিন্তু ওই যুবক কামালকে মন্দিরের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে সটকে পড়ে। পুলিশ ওই ২ যুবককেও খুঁজছে। কোতয়ালী থানা পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে কামাল মোঃ হানিফকে মানসিক রোগী হিসাবে মনে করে। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও সেরকম দাবি করা হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোন ডাক্তারি চিকিৎসাপত্র দেখাতে পারেনি। ১৯৮৬ সালে কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স পাশ করে প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করে। এর আগেও সে তাঁতি বাজার ও নেত্রকোনায় মন্দিরে হামলা করেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রউফ আজকের কাগজকে জানান, মন্দিরের মূর্তি ভাংচুরের পেছনে গোপন কোনও সংগঠনের হাত থাকতে পারে। এ জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুনরায় ৫ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। এদিকে মন্দিরে মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় বুধবার পুরাতন ঢাকার কোতয়ালী থানায় ২৪ ঘন্টা হরতাল পালিত হয়। গতকালও সারাদিন ওই এলাকার হিন্দু সম্পদায়ের লোকজন কালো ব্যাচ ধারণ এবং বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করেন। মন্দির কমিটির নেতা অজয় কুমার নন্দী আজকের কাগজকে জানান, মূর্তি ভাংচুরে হিন্দু সম্প্রদায় শোক পালন করেছে। মন্দিরে ভাংচুরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, গ্রেফতারকৃত কামাল মানসিক রোগী নয়। সে পুলিশের কাছে পাগলের অভিনয় করছে। গত মঙ্গলবার রাতে শনিদেব মন্দিরের মূর্তি ভাংচুরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন। সংগঠনগুলো হচ্ছে- ১১দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, অনির্বাণ সংসদ, সিটিজেন ভয়েস, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনসহ ৭টি সংগঠন। মন্দিরের মূর্তি ভাংচুরের প্রতিবাদে শ্রী শ্রী শনিদেব মন্দির কমিটি আজ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল ও আগামীকাল সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কোতয়ালী থানা এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজকের কাগজ, ১১ জানুয়ারি ২০০২