কেশবপুর উপজেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামগুলোর মানুষ ডাকাত আতঙ্কে ভুগছে। গত বুধবার রাতেও উপজেলার কুড়িয়াখালী এবং কোমরপোল গ্রামে সংখ্যালঘুদের ৬টি বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। এ নিয়ে দু’সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সংখ্যালঘুদের ৪৪টি বাড়িতে ডাকাতি হলো। পুলিশ এসব ঘটনায় একজনকেও আটক করতে পারেনি। ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে পুলিশ এসব ঘটনাকে ডাকাতি বলতে রাজি নয়, বলেছে দস্যুতা। নির্বাচনের পরপরই কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এবং বাজারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দোকান এবং বাড়িতে হামলা হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে তা বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটকও করে। ফলে কিছুদিন সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আবার বিভিন্ন গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে ডাকাতি শুরু হয়েছে। একটি চরমপন্থী দলের পরিচয় দিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামে ৩৮টি সংখ্যালঘু বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ২০/২৫ জনের ডাকাত দল একটি চরমপন্থী দলের পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একে একে গ্রামের রামপদ ঘোষ, পরিতোষ, গোপাল, প্রদ্যুত, পরিমল, সূর্য, অশোক, সুকুমার, বিশ্বজিৎ, রাজকুমার, স্বদেশ, নিরাপদ, শান্ত, শিনু, দুর্গা, রবিন, চিত্ত, দুলাল, মনি, সন্তোষ, সুভাষ, কালিপদ, দিলীপ, অনিল, গৌর, ঠাকুর ঘোষ ও বিকন ঘোষের বাড়ী সহ ৩৮ বাড়িতে ডাকাতি করে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে উপজেলার কুড়িয়াখালী এবং কোমরপোল গ্রামের মনোরঞ্জন দাস, পরিতোষ, চৈতন্য দাস, নিত্যরঞ্জন, দুলাল চন্দ্র, গোবিন্দ দাসের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ১২ থেকে ১৪ জনের ডাকাতদল প্রত্যেক বাড়ির মানুষকে জিম্মি করে ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৩৭ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি। তবে যাদের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে তারা বলেছে, পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর সাতবাড়িয়ার ঘটনায় পুলিশ দস্যুতা মামলা নিয়েছিল থানায়। ঘটনাস্থলও পুলিশ পরিদর্শন করেছিল। তবে সাতবাড়িয়াতে ডাকাতি করে চলে যাবার সময় ডাকাতরা বলে গিয়েছিল, একমাস পর আবার আসবে। গত বুধবারের ঘটনার পর সাতবাড়িয়ার মানুষ আবার ডাকাত আতঙ্কে ভুগছে। এসব ডাকাতির ঘটনা ছাড়াও সাতক্ষীরার তালা এবং খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সংলগ্ন কেশবপুরের বিভিন্ন গ্রামে একটি চরমপন্থী দলের ক্যাডাররা সংখ্যালঘুদের বাড়িতে গিয়ে রাতে চাঁদা দাবি করছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসী বিষয়টি পুলিশে জানাতে ভয় পাচ্ছে। তবে তাদের অভিযোগ, কয়েকটি এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও তারা নিষ্ক্রিয়। কেশবপুর পুলিশ এসব ডাকাতির ঘটনা অস্বীকার করে বলেছে, এটা ডাকাতি নয়, দস্যুতা। এসব ঘটনার পর অনেক এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও পুলিশ দাবি করেছে। তবে দেখে দেখে সংখ্যালঘু বাড়িতে দস্যুতার ঘটনা কেন ঘটছে, এ প্রশ্নের কোন জবাব পুলিশ দিতে পারেনি।

দৈনিক জনকন্ঠ, ১২ জানুয়ারি ২০০২

মন্তব্য করুন