একজন ব্যবসায়ীকে মাদক মামলায় জড়িয়ে তিন লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। টাকা না দিলে আরও মামলা করে পলাতক আসামিকে ‘ক্রসফায়ারে’র হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
১৬ আগস্ট রোববার বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সিলেটের জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. আবদুন নাসেরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছে একটি পরিবার। তবে এ অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন ওসি আবদুন নাসের।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, জকিগঞ্জ কসকনকপুর ইউনিয়নের উত্তর আইয়র গ্রামের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের বাড়িতে গত ২৯ জুলাই সন্ধ্যার পর জকিগঞ্জ থানার একদল পুলিশ যায়। নজরুল ইসলাম মাদক ব্যবসা করছেন উল্লেখ করে পুলিশ তাঁর স্ত্রী, এক মেয়েসহ বাড়িতে ইলেকট্রিকের কাজে থাকা দুই যুবককে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনজনকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তাঁরা কারাগারে আছেন এবং পলাতক হয়েছেন ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম।
সম্প্রতি পুলিশ পরিচয়ে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন। টাকা দিতে না পারলে পলাতক নজরুল ইসলামকে জকিগঞ্জ থানার ওসি ক্রসফায়ারে মেরে ফেলবেন বলে হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবারটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে নজরুলের পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে তানহা আক্তার। লিখিত বক্তব্যে মেয়েটি বলে, ‘আমার বাবা নজরুল ইসলাম সততা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের সংসার চালাচ্ছেন। তিনি কোনো অন্যায় কাজে জড়িত নন। একটি প্রভাবশালী মহল পরিকল্পিতভাবে তাঁকে মাদক মামলার আসামি করেছে। প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে পুলিশ গত ২৯ জুলাই আমার মা ফাতেহা বেগম, আমার বোন নুসরাত বেগম এবং আমাদের গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিবরিয়া ও রাসেল আহমদকেও আসামি করেছে। তাঁরা কারাবন্দী আছেন।’
পুলিশ তাদের বাড়িতে সন্ধ্যায় গেলেও মামলার এজাহারে মধ্যরাতে অভিযান হয়েছে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২৯ জুলাই বাড়িতে কোনো রকম মাদকদ্রব্য উদ্ধার করার ঘটনাই ঘটেনি। বাড়িতে কোনো মাদকও ছিল না। তবু আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে, এমন তথ্য এজাহারে উল্লেখ করা হয়। যা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
জকিগঞ্জে ২ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবদুল মান্নান ওরফে মুন্না আহমদ (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে সুলতানপুরের অজগ্রামে এ ঘটনা ঘটেছিল। নিহত আবদুল মান্নান জকিগঞ্জের খাদিমান এলাকার বাসিন্দা। তাঁর নামে মাদক, ডাকাতি ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১২টি মামলা ছিল জকিগঞ্জ থানায়।
সংবাদ সম্মেলনে তানহার সঙ্গে তার খালা লাইলী বেগম, নিকটাত্মীয় নিপা বেগম, রাহেল মিয়া, রজিমুদ্দিন, সুলতানা বেগম, সুফিয়া বেগম, জলিল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আবদুন নাসের প্রথম আলোকে বলেন, তিন লাখ টাকা দাবি ও ক্রসফায়ারের হুমকির বিষয়টি কেউ তাঁকে জানায়নি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদকের মামলাটি সাজানোর দাবি প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদকের আরও মামলা আছে। মাদক ব্যবসায়ী বলে এলাকার ৮০ ভাগ মানুষ নজরুলকে চেনেন ও জানেন। সংবাদ সম্মেলন করে যেসব অভিযোগ তাঁরা করেছেন, এসবের সঙ্গে পুলিশের ন্যূনতম কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মাদক ব্যবসায় তাঁরা জড়িত বলেই এসব প্রচার করছেন।’