কিশোরগঞ্জ সদরে এক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্তা এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর শারীরিক নির্যাতনে গর্ভের সন্তান ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই নারী মাইজখাপন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বকুল মিয়াকে আসামি করে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল নং-১ এ একটি মামলা করেছেন।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী বর্তমানে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর মা জানান, পাঁচ মাস আগে মীরপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম রিংকুর সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। রিংকু অন্তঃসত্তা স্ত্রীর খোঁজখবর না নেওয়ায় ও ভরণ পোষণ না দেওয়ার কারণে মানবেতর দিন কাটাচ্ছিল তাঁর মেয়ে। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বকুল মিয়া সরকারি গর্ভবতীদের জন্য রেশন কার্ড দেওয়া ও মাটি কাটার চাকরির লোভ দেখিয়ে দুই দফায় ৩১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
ওই গৃহবধূর মা আরও জানান, গত ১৮ আগস্ট গর্ভবতী নারীদের জন্য কার্ড দেওয়ার কথা বলে বকুল মিয়া নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে তার মেয়েকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় গত ২৪ আগস্ট তার মেয়ে বাদী হয়ে বকুল মিয়াকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল নং-১ মামলা করেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট এম এ আফজাল মামলা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলাটি গ্রহণ করে বিচারক কিরণ শংকর রায় ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। এটি একটি ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবন সাজার যোগ্য গুরুতর অপরাধ।
মামলার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৩১ আগস্ট রাতে ওই নারীকে মারধর করার এক পর্যায়ে পেটে লাথি দিলে গুরুতর আহত হন এবং ব্যাপক রক্তপাত হয়। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করলে ওই নির্যাতিতা নারী একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করেন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের ডা. মো. হেলাল উদ্দিন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ওই নারীর রক্তপাত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, নির্যাতনের ফলেই তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়েছে কিনা।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর মা জানান, চিকিৎসা সনদ হাতে পাওয়ার পর গর্ভের শিশু হত্যার অপরাধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মূল অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বকুল মিয়ার বক্তব্য জানতে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার পরিদর্শক রমিজুল হক জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ তদন্ত কার্যক্রম চলছে। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।