অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক কারণে নিবন্ধিত নিউজ পোর্টালও বন্ধ করতে পারবে সরকার। অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল সাত দিনের মধ্যে বন্ধ করার যে আদেশ আদালত দিয়েছেন সেখানে বলা হয়েছে, যেসব নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল অনৈতিক, মানহানিকর ও গুজবসংক্রান্ত তথ্য ছড়ানোর সঙ্গে যুক্ত সেসব পোর্টালও বন্ধে সরকারের স্বাধীনতা রয়েছে। এই আদেশের ফলে সরকার শুধুই অনুমোদনহীন ও অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল নয়, নিবন্ধিত নিউজ পোর্টালও বন্ধের ক্ষমতা পেল বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে অনুমোদনহীন ও অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ দেন। ওই আদেশে রিট আবেদনকারীর দাখিল করা
নিবন্ধিত ৯২টি পোর্টাল ছাড়া অন্য সব অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। আদেশের কপি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে বিটিআরসি ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এই আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরকারকে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই দিন পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য রাখা হয়েছে।
আদালতের আদেশের তথ্য জানার পরই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অনিবন্ধিত সব নিউজ পোর্টাল বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ।
বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খোন্দকার রেজা-ই-রাকিব গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, বিটিআরসি আদালতের আদেশের কপি এখনো পায়নি। তবে আদালতের আদেশের তথ্য জানার পর তারা সব প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আদালত সাত দিনের মধ্যে বন্ধ করতে বলেছেন। তবে বিটিআরসির এত দিন লাগবে না। আদেশের কপি পাওয়ার এক দিনের মধ্যেই সব অনিবন্ধিত পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসি প্রস্তুত রয়েছে।
আদালতের আদেশের বিষয়ে গত বুধবার তথ্যমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অবশ্যই কিছু অনলাইন আমরা বন্ধ করব।’ তিনি আরো বলেন, নিবন্ধন দেওয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন চলছে এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া সব একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া কতটুকু সমীচীন সে ভাবনার বিষয়গুলো আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
রিট আবেদনকারী অ্যাডভোকেট রাশিদা চৌধুরী নীলু গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদালতের আদেশের লিখিত কপি এখনো আমাদের হাতে আসেনি। শুনেছি লিখিত আদেশ সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এই আদেশের কপি তথ্য মন্ত্রণালয়, বিটিআরসিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি ৯২টি নিবন্ধিত নিউজ পোর্টালের তালিকা দাখিল করি। এই তালিকার ভিত্তিতে আদালত আদেশ দিয়েছেন। তবে আদেশের পর জানতে পারলাম, ওই তালিকার বাইরেও অর্থাৎ এর পরও সরকার আরো কিছু নিউজ পোর্টালকে অনুমোদন দিয়েছে।’
এই আইনজীবী বলেন, আদেশের তাৎপর্য হলো, যেসব অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল আছে, তা বন্ধ হবে। সরকার যেসব পোর্টালকে অনুমোদন দিয়েছে তা তো আর বন্ধ করা যাবে না। আদালতের আদেশের উদ্দেশ্যও সেটা নয়।
জানা যায়, গত বছর ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার দেশের ৯২টি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন, ৮৫টি অনলাইন পত্রিকার নিবন্ধন দিয়েছে। এ ছাড়া নিবন্ধনের জন্য এক হাজার ৭৩২টি অনলাইন পত্রিকার আবেদন তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশিদা চৌধুরী নীলু ও ব্যারিস্টার জারিন রহমানের করা এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত ১৬ আগস্ট অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধ; নিবন্ধনের জন্য বিবেচনাধীন অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া; সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা, সাংবাদিকদের উচ্চ মানসম্পন্ন পেশাদারির জন্য একটি নৈতিক আচরণবিধি করা এবং একটি ‘ব্রডকাস্টিং কমিশন’ গঠনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রশ্নে রুল জারি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৯২টি নিউজ পোর্টালের তালিকাসংবলিত সম্পূরক আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে অনিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।