নোয়াখালীতে গণধর্ষণ
এই দেশে ক্ষমতাসীনদের কথামতো না চলা গুরুতর অপরাধ। আর এই অপরাধের কারণে গণধর্ষণের শিকার হলেন চার সন্তানের জননী।
 
৩০ ডিসেম্বর রবিবার ভোট দিতে যান নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবিলী ইউনিয়নের এক নারী। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সেই নারীকে নৌকায় ভোট দেয়ার নির্দেশ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন। কিন্তু নারী ভোটার জানান তিনি ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন। এসময় রুহুল আমিন ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন, কারণ ইতিমধ্যে ব্যালট পেপারটি বাক্সে চলে যায়।
 
এই যে একজন সাধারণ নারী ভোটার রুহুল আমিনের মত প্রতাপশালী ব্যক্তির কথা শোনেননি, এতে করে রুহুল আমিনের মানহানি ঘটে। তাই তিনি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থেকেই ওই নারীকে ‘দেখে নেয়ার’ হুমকী দেন।
 
এই ‘দেখে নেয়া’ যে কতটা নির্মম হতে পারে, ধানের শীষে ভোট দেয়া সাধারণ নারী তখন বুঝতেই পারেননি। গভীর রাতে যখন ১২ জন মানুষ বাড়িতে হামলা করে ঘরে ঢুকে তার স্বামী ও চার সন্তানকে বেঁধে ফেলে, তখনো পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। কিন্তু যখন তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে হুমকী দেয়া রুহুল আমিনের নেতৃত্বে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়, তখন তিনি বুঝতে পারলেন ক্ষমতাসীনদের কথামতো না চলা কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
 
ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিকদের জানান, গতকাল মধ্যরাতের পর ১০ থেকে ১২ জন লোক হাতে লাঠিসোটা নিয়ে বেড়া কেটে তার বাড়িতে ঢুকে। স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।
 
নির্যাতিত নারীর স্বামী (যিনি নিজেও আহত) জানান, আনুমানিক রাত চারটার দিকে তার স্ত্রীকে মারাত্মক আহত করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রাখে এবং ৪০ হাজার টাকা, সোনার গয়না ও অন্যান্য দামী জিনিসপত্র নিয়ে ধর্ষণকারীরা পালিয়ে যায়।
 
এরপর, ওই নারীর স্বামী ও সন্তানের কান্নাকাটি শুনে প্রতিবেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, “প্রথমে গ্রামের একজন চিকিৎসককে ডাকা হয়। কিন্তু, ওই নারীর শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকায় দুপুরে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
 
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, তারা ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন। ভুক্তভোগীর শরীরে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
 
সুবর্ণচরের এই নারী হয়তো পূর্ণিমার নাম শোনেননি, অথবা শুনেছেন। ২০০১ সালে তার বাবা মা ধানের শীষে ভোট দেয়নি বলে মেয়েটিকে দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর। এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় পূর্ণিমার প্রতি সেই নির্যাতনের শতভাগ ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ। ভবিষ্যতে হয়তো সুবর্ণচরের এই নারীকেও বিএনপি তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করবে।
 
কিন্তু ধর্ষণ থামছে না, থামবে না। কারণ ধর্ষণের বিচার করতে সকল পক্ষের ব্যাপক অনীহা। সবচে বেশি রাজনৈতিক অনীহা।হাজার হাজার ধর্ষণের ঘটনার কোন বিচারই হয়নি। আলোচিত পূর্ণিমা ধর্ষণের বিচারের রায় পাওয়া গেছে ১০ বছর পর ২০১১ সালে। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এই নারী কবে বিচার পাবেন, কে জানে!

সংযুক্তি ১: স্বামী নিজে বাদী হয়ে সোমবার রাতে ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার ভিত্তিতে পুলিশ বাদশা আলম নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে।
সংযুক্তি ২: রুহুল আমিনকে কেন মামলায় আসামি করা হয়নি সে ব্যাপারে জানতে বাদী বলেন, ‘আমি অশিক্ষিত মানুষ, থানায় গিয়ে ঘটনা খুলে বলেছি। পুলিশকে বলেছি সব লিখে নিতে। তারা কেন রুহুল আমিনের নাম লিখে নাই বলতে পারি না।’
সংযুক্তি ৩: এ ব্যাপারে চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, ‘বাদী যার যার নাম উল্লেখ করেছে তাদেরই আসামি করা হয়েছে।’
সংযুক্তি ৪: মোবাইল ফোনে রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোটের ওই কেন্দ্রে আমি ছিলাম না। আর ধর্ষণের ঘটনার বিষয়েও কিছু জানি না।’ তিনি জানিয়েছেন, তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।
সংযুক্তি ৫: মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষণের অভিযোগ তদন্ত করার কথা জানান।
সংযুক্তি সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

গ্রেফতার আপডেট:
বুধবার রাত পৌনে তিনটায় প্রধান অভিযুক্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনকে উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ওয়াপদা এলাকার একটি খামার থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া এজাহারভুক্ত অন্য আসামি বেচুকে জেলার সেনবাগ উপজেলার খাঁজুরিয়া গ্রামের একটি ইটভাটা থেকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে, বুধবার দুপুরে কুমিল্লা থেকে সোহেলকে এবং মঙ্গলবার রাতে সুবর্ণচর থেকে মো. স্বপন নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও বাদশাহ আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হলো বলে জানিয়েছেন নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ।

মন্তব্য করুন