নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা এক স্কুলছাত্রীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর শিশু উন্নয়ন (মহিলা) কেন্দ্র।

ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে গত ২৫ জুন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (মহিলা) তত্ত্বাবধায়ক তাসনিম ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলাটি করেন। রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় করা ওই মামলার আসামিরা হলেন গাজীপুর জেলা পুলিশ লাইন্সে কর্মরত নায়েক সাইফুল ইসলাম ও কনস্টেবল রোকসানা এবং ঢাকা জেলার ধামরাই থানার ধুনি গ্রামের আবদুল হাইয়ের ছেলে নাঈম হাসান (২৬)।

মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় নাঈম হাসানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের এবং সাইফুল ও রোকসানার বিরুদ্ধে একই আইনের ৯(৫) ধারায় পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাজধানীর কাফরুল থানাধীন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে ছাত্রীর বাবা ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল কাফরুল থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর- ১(৪)২০১৮।

ওই মামলায় নাঈম হাসান ও জনৈক মোতালেবসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আসামি করা হয়। মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল বাদীর স্ত্রী তার মেয়েকে স্কুলে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নিয়ে যান।

মেয়েকে অনুষ্ঠানস্থলে রেখে স্ত্রী বাথরুমে যান। বাথরুম থেকে ফিরে এসে মেয়েকে আর পাননি। পরে জানতে পারেন আসামি নাঈম হাসান ও জনৈক মোতালেবসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন তাদের মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। পরে পুলিশ বাদীর মেয়েকে গত বছর ১৬ এপ্রিল উদ্ধার করে আদালতে হাজির করলে আদালত গাজীপুরের কোনাবাড়ীর শিশু উন্নয়ন (মহিলা) কেন্দ্রে নিরাপদ হেফাজতে পাঠান।

নিরাপদ হিফাজতে থাকাকালীন অবস্থায় চলতি বছর ১৪ জানুয়ারি শিশু উন্নয়ন (মহিলা) কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল সামী মামলাটির বিচারিক আদালত নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-৪কে জানান, নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা ওই নাবালিকা ১৩ জানুয়ারি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল হাসপাতালের আল্টাসনোগ্রাম রিপোর্ট অনুযায়ী ২৭ সপ্তাহের গর্ভবতী।

গর্ভবতী হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ওই নাবালিকা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই আদালতের কার্যক্রম শেষে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ফেরার সময় রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে সেখানে আসামি নাঈম হাসানের সঙ্গে তার দেখা হয়।

ওই রেস্টুরেন্টের ভেতর তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। মামলার বাদী নাবালিকার বাবা ১২ মার্চ ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল জড়িতদের চিহ্নিত করতে শিশু উন্নয়ন (মহিলা) কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন। তদন্ত করে ৭ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালকে জানায়, ঘটনার দিন ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই ভিকটিম নাবালিকাকে নায়েক সাইফুল ও কনস্টেবল রোকসানা আদালতে নিয়ে আসেন।

তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায়ই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর পর ২০ মে ট্রইব্যুনাল অপহরণ মামলার আসামি নাঈম হাসানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করতে আদেশ দেন। এ ছাড়া নাবালিকাকে আদালতে নিয়ে আসা নায়েক সাইফুল ও কনস্টেবল রোকসানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নির্দেশ দেন।

সে অনুযায়ী ২৫ জুন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক তাসনিম ফেরদৌস বাদী হয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় আসামি দুই পুলিশ সদস্য এবং আসামি নাঈম হাসান গ্রেপ্তার হননি। নাঈম হাসান অপহরণের মামলায় জামিনে থেকে পলাতক। গত ১৯ মে নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল তার জামিন বাতিল করেছেন।

এ সম্পর্কে ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর ফোরকান মিয়া বলেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল ঘটনাটি জানার পর তদন্তের নির্দেশ দেন।

এর পর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী মামলা করার নির্দেশ দেওয়ার পর কোতোয়ালি থানায় মামলাও হয়েছে। উল্লেখ্য, গর্ভবতী হওয়া ভিকটিম নাবালিকা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (মহিলা) নিরাপত্তা হেফাজতে গত ২৭ এপ্রিল শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল হাসপাতালে একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। মা ও শিশু এখনো শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেই রয়েছেন।

বাংলা রিপোর্ট

মন্তব্য করুন