কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের আয়নারকান্দি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫ শতাধিক লোক সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। গত ক’মাস ধরে নীরব চাঁদাবাজি চালালেও সম্প্রতি এই সন্ত্রাসী চক্রটি এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, চাঁদা আদায়ের জন্য তারা মৃতদেহও জিম্মি করেছে। বিপুল পরিমাণ চাঁদা দিতে ব্যর্থ কোনো কোনো পরিবারের কাছে তারা মেয়ে দাবি করছে। এই বিভীষিকাময় অবস্থায় আতঙ্কিত লোকজন কিশোরী ও যুবতী মেয়েদের অন্যত্র সরিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের অন্যায় আবদার পুরণ করতে না পেরে গত ১৫ দিনে গ্রামের কমপক্ষে ২০টি পরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গতকাল শনিবার সরেজমিন আয়নারকান্দি গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পেতে এবং নিরাপত্তা চেয়ে গ্রামবাসীর পক্ষে সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়সহ প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমান বরাবর আবেদন জানানো হয়েছে। ওই পত্রে থানা পুলিশ থেকে কোন সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। গতকালও এই প্রতিবেদককে দেখে গ্রামের অশীতিপর পঞ্চায়েত প্রধান গৌরাঙ্গ ঋষিদাস বলেন, আমাদের বাঁচাইন, আমরা আর থাকতে পারছি না।’ হিন্দু ধর্মাবলম্বী দরিদ্র চর্মকার সম্প্রদায় অধ্যুষিত হাওরপাড়ের ঘোড়াউত্রা নদী তীরবর্তী আয়নারকান্দি গ্রামে প্রায় ৬০টি সংখ্যালঘু পরিবারের বাস। গ্রামের শতাধিক পুরুষ জুতা সেলাই ও পালিশের কাজে ঢাকায় থাকে। বর্তমানে গ্রামে অবস্থানকারীদের অধিকাংশই বৃদ্ধ নারী-পুরুষ ও শিশু। গ্রামবাসী জানান, সন্ত্রাসের সবীকার হয়ে গত এক মাসে ২০টি পরিবারের শতাধিক নারী-পুরুষ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। সরেজমিন গিয়ে পালিয়ে যাওয়া এসব পরিবারের বাড়িঘর তালাবদ্ধ দেখা গেছে। গ্রামবাসী অভিযোগ করেছে, এলাকার আলী, জিয়া, এরশাদসহ ১৫/২০ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী গত প্রায় এক মাস ধরে এই গ্রামে চাঁদাবাজি করছে। এখন প্রায় প্রতি রাতেই সন্ত্রাসীরা গ্রামে হানা দিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। নাম প্রকাশে ভীত কয়েকজন গ্রামবাসী এ প্রতিনিধিকে জানান, গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে হরেকৃষ্ণ ঋষিদাস (৬০) ও শুভরঞ্জর ঋষিদাস (৩৮) বলিয়াদী ইউপি সদর হাটে যাওয়ার পথে কয়েকজন সন্ত্রাসী মুসলমানদের জমি কেনার ‘অপরাধে’ তাদের বেদম প্রহার করে। এ ঘটনার আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রামের মোহনলালের বাড়িতে গিয়ে সন্ত্রাসীরা তার স্ত্রী আশা রানীর (৩৬) কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। ঢাকা প্রবাসী মোহনলাল গ্রামের বাড়িতে সম্প্রতি একটি নতুন ঘর তোলে। চাঁদাবাজদের হুমকির মুখে ওইদিনই আশা রানী ঘরে তালা দিয়ে পাঁচ ছেলেমেয়েসহ গ্রাম ছেড়ে পালায়।
প্রথম আলো, ১০ মার্চ ২০০২