লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় ট্রেনের যাত্রী এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সালিস বৈঠকে রফাদফার মাধ্যমে জরিমানাও আদায় করেন মাতব্বররা। সেই জরিমানার টাকাও চলে যায় ওই মাতব্বরদের পকেটে।
৯ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে কালীগঞ্জ প্রেসক্লাব এলাকা থেকে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ শুক্রবার রাতেই রকি নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার রকি তুষভান্ডার ইউনিয়নের তালুক বানিনগর গ্রামের রজব আলীর ছেলে। রকি পেশায় একজন অটো চালক।
এ ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ধর্ষক ৭জন ছাড়াও স্থানীয় একটি অনলাইন পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক, একজন ইউপি সদস্য এবং সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া বাড়ির মালিককে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
কালীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, মোহাম্মদ নুরু (৪০), মো. রঞ্জু (৩৫), রকি মিয়া (১৯), মো. আল-আমিন (৩০), বরাত মিয়া (২৬), মোর্শেদ (২১), আওলাদ (৪০), আজিজুল (৪৫), সোলেমান (৫০) ও নুর আলমগীর অনু ।
পুলিশ জানায়, পাটগ্রাম উপজেলার নিজ বাড়ি নবীনগর থেকে বোনের বাড়ি হাতীবান্ধা বেড়াতে যাওয়ার জন্য ৬ অক্টোবর মঙ্গলবার লালমনিরহাটগামী আন্তনগর করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে রওনা দেয়। কিন্তু মেয়েটি ভুল করে হাতীবান্ধা রেল স্টেশনে না নেমে কাকিনা স্টেশনে নেমে পড়ে। এ সময় কাকিনা স্টেশনে নিজেকে রকি পরিচয় দিয়ে এক ছেলে জানতে চাইলে ওই কিশোরী হাতীবান্ধা যাচ্ছেন বলে পরিচয় দেয় যুবক রকিকে। এ সময় রকিও নিজেকে হাতীবান্ধার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। রকি অটোরিকশা যোগে হাতীবান্ধা যাবেন এবং সেই অটোরিকশায় তাকে তার বোনের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক একটি অটোরিকশা যোগে রকি নামের ওই যুবক তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে হাতীবান্ধা যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মধ্যরাতে একটি পরিত্যক্ত শ্যালো মেশিনের ঘরে নিয়ে গিয়ে রকির সঙ্গে যোগ দেওয়া আরো ৬ যুবক মিলে পালাক্রমে তরুণীকে ধর্ষণ করে। পরদিন ৭ অক্টোবর বুধবার সকালে মুখ না খোলার শর্তে তরুণীকে মুক্তি দেয়।
এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় স্থানীয় এক গ্রাম পুলিশ সদস্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয় ধর্ষিতা তরুণী। ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাতব্বররা বৈঠকে বসে ধর্ষণকারী যুবকদের শনাক্ত করে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন বলেও ধর্ষণের শিকার তরুণী দাবি করেন।
জরিমানার টাকা তরুণীকে না দিয়ে উল্টো তাকে হুমকি দিয়ে পথ খরচ বাবদ দুই হাজার টাকা দিয়ে মাতব্বররা তাকে পাঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তরুণী।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) ফরহাদ হোসেন বলেন, ধর্ষিতা তরুণীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত করে একটি মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলায় ১০জন আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি ৭জন ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ইতিমধ্যেই একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে শনিবার শারীরিক পরীক্ষার জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে নির্যাতিতা মেয়েটি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, কালীগঞ্জ থানায় মামলা রেকর্ড হয়েছে। ইতিমধ্যেই একজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকি আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।