ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধ, ধর্ষণ ও লুটতরাজকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে শুরু হয়েছে আমরণ অনশন। গতকাল শুক্রবার জাতীয় শহীদ মিনার চত্বরে সকাল ১০টা থেকে সচেতন ছাত্র সমাজের ব্যানারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০ জন ছাত্রছাত্রী এই আমরন অনশন শুরু করেছে। এদের অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। উল্লেখ্য, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারাদেশে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা শুরু হয়। দিন দিন এই হামলার মাত্রা বেড়ে চলেছে। কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ও দোকানপাট দখল, বিভিন্ন ধরনের সম্পদ লুট এবং সংখ্যালঘু মেয়েদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে । সংখ্যালঘুদের অনেকেই নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েছে। এসব ঘটনা একের পর এক ঘটতে থাকলেও প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য আমরণ অনশনের মত কঠিন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছে সচেতন ছাত্রসমাজ। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি চলবে বলে অনশনরত ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, কর্তৃপক্ষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আরো বলেন, সারাদেশে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চলছে, চলছে লুটপাট, ধর্ষিত হচ্ছে মেয়েরা, তখন প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। অনশনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, সারাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমরা আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিশ্চিত হবো যে সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তি নিরাপদ ততক্ষণ আমাদের এই কর্মসূচি চলবে এবং প্রয়োজনে আত্মাহুতি দেব। অনশন কর্মসূচির সঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পাটির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ডক্টরস্ ফর হেলথ্ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের নেতা ডা. ফজলুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জগন্নাথ হল শাখা, বিতর্ক একটি তার্কিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ সংহতি প্রকাশ করেছে। তারা অনশনকারীদের খোঁজ খবর নেন এবং তাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোন ধর্মীয় পরিচয়ে মানুষের ওপর আঘাত এই চেতনাকে বিনষ্ট করবে।
সংবাদ, ১৩ অক্টোবর ২০০১