দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ধারাবাহিকতায় ফরিদপুর এবং রাজশাহীতে মন্দির ও দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। মাগুরায় এক সংখ্যালঘু পরিবারের দুই মেয়েকে অপহরণ করেছে। ফরিদপুরের নগরকান্দা, ভাঙ্গা ও বরগুনার পাথরঘাটা ও আমতলী এখন আতঙ্কের জনপদ। সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। আমাদের প্রতিনিধির পাঠানো খবর: মাগুরা মঙ্গলবার গভীর রাতে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী শ্রীপুরের নহাটা পালপাড়ার নিখিল চন্দ্র ও গোবিন্দর বাড়িতে হানা দেয়। দুর্বৃত্তরা দুই বাড়ি থেকে স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তবে কয়েক ঘন্টা পর এদের উদ্ধার করা হয়। বাধা দেওয়ায় সন্ত্রাসীরা নিখিল, গোবিন্দ ও তার স্ত্রী নিপারানী (৩০) ও সুনীলাকে (২৯) কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, গত মঙ্গলবার শতাধিক বিএনপির সমর্থক নগরকান্দার মানিকদী গ্রামের কলেজ শিক্ষক রণজিত মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল, দরজা-জানালা, টিন লুট করে এবং দুইটি গরু জবাই করে মাংস ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। পিটিয়ে আহত করে রণজিতের কিশোর ভাতিজা সুমনকে। রণজিত মণ্ডলের ভাইয়ের এক মামলায় পুলিশ ওই দিন রাতেই নয়জনকে গ্রেফতার ও কিছু মালামাল উদ্ধার করেছে। গত রোববার নগরকান্দার ফুলবাড়িয়া গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটতরাজ করে সন্ত্রাসীরা। চিত্র মণ্ডল ও রণজিত সাহাকে মারধর করে হুমকি দেয়, ১ লাখ টাকা না দিলে তাদের খুন করা হবে। ওই দিনই চৌষারা গ্রামের অনেক আ’লীগ সমর্থকদের বাড়িতে ভাংচুর, লুটতরাজ করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে ওসি দুর্ব্যবহার করলে এসপির নির্দেশে মামলা নেয়া হয়। রোববার রাতেই ফরিদপুর শহরের বাসস্ত্যান্ডে নির্মাণাধীন দুটি দুর্গা মূর্তি দুর্বৃত্তরা গুড়িয়ে দেয়। গত শুক্রবার নগরকান্দার মাঝারদিয়া বাজারে তপন দাসের দোকান লুট করা হয়। উপজেলার দফা গ্রামের জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ফুলমতির দুটি এবং সাকরাইল গ্রামের একটি সংখ্যালঘু বাড়িতে লুটতরাজ হয়েছে। রানাপাশা ও দুলালী গ্রামের দুই ব্যক্তিকে বলা হয়েছে, ৩ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে দেশ ছাড়তে হবে। গত ৩ অক্টোবর মধুখালীর বাগাট বোসপাড়ার কলেজশিক্ষক বিষ্ণু বোসের ঘরে আগুন দেয়া হয় এবং হামলা হয় স্কুল শিক্ষক কার্তিক শিকদারের ওপর। এই দিনই বোয়ালখালীর সূর্যদিয়া গ্রামের অনেক সংখ্যালঘুকে মারধর করা হয়। গত শুক্রবার হাসানদিয়া গ্রামে শীতলা মন্দিরে আগুন দেয়া হয়। অনেকের বাড়ি লুন্ঠন করা হয় এবং মারধর করা হয় গৃহবধু ও বৃদ্ধাদের। এ সময় দুর্বৃত্তরা এক সংখ্যালঘুর তিন মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করে। বরগুনা প্রতিনিধি জানান, পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া, কাঁঠালতলী, চরদুয়ানী, রায়হানপুর এবং আমতলী উপজেলার সাঙ্গারপাড়া, চাউলাপাড়া, তারতলী, আরপাঙ্গালিয়া, কড়ইবাড়িয়া, বগী এখন আতঙ্কের জনপদ। নির্বাচনের পর বিএনপির হামলায় আহত হয় অন্তত ২৫জন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, চরদুয়ানীর ইউপি চেয়ারম্যান আ,লীগ নেতা হাফিজ উদ্দিন ফিরোজকে তার বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বামনা উপজেলার উত্তর কাকচিড়া গ্রামের ইউপি সদস্য নরেন হালদারকে ধরে এনে বিএনপির সমর্থকরা প্রকাশ্যে তার চক্ষু তুলে ফেলার চেষ্টা করলে জনতা বাধা দেয়। আমতলীতে ২১ মামলার আসামী বিএনপি নেতা ভিপি মজিবর এবং চরদুয়ানীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি সমর্থক ওয়ারেচ আলী এসব কর্মকাণ্ডের হোতা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজশাহী অফিস জানায়, রোববার রাতে তানোর উপজেলার হরিদেবপুর গ্রামে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে সন্ত্রাসীরা পুঠিয়া উপজেলার শীলমারিয়া গ্রামে একটি কালী মন্দির ভাংচুর ও লুটপাট করে। ওই রাতেই গোদাগাড়ি উপজেলার মহড়াপাড়ায় প্রভাষ ঘোষের বাড়ি লুট করা হয় এবং লাঞ্ছিত করা হয় মহিলাদের। একই রাতে বেলপুকুরিয়ায় এক আ.লীগ সমর্থকের পেট্রল পাম্প ভাংচুর ও টাকা পয়সা লুন্ঠন করা হয়। মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কোনো কোনো এলাকার সংখ্যালঘুরা দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রথম আলো, ১১ অক্টোবর ২০০১