বাগেরহাটের সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বিজয়ী ইউপি সদস্য ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজ শেষে স্থানীয় শেখরা জামে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে।
আহতদেরকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবুল ফকির (৫৫) নামের একজনকে বিকালে খুলনা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচনের আগের জুমায় শেখরা জামে মসজিদের ইমাম ইকবাল মাহমুদ জুমার খুতবায় বলেছিলেন, ‘আগে গ্রামে এক চোর ছিল, সে মৃত মানুষের কাফন চুরি করতো। আর পরে যে চোর এসেছে, সে কাফনতো চুরি করে মানুষের পেছনে বাঁশও দেয়।’ স্থানীয় মুসল্লিরা এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী (আজ) জুমায় বলবেন’। আজ জুমার আগে এর ব্যাখা চাইলে ইমাম বলেন, ‘আমাকে মাফ করবেন। এর ব্যাখ্যা আমি দিতে পারবো না’। এ নিয়ে দুই পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। ইমাম ভুল স্বীকার করার পর এক পক্ষ বলে, ‘আপনি আর মসজিদে আসবেন না’। অপর পক্ষ বলে, ‘কেন আসবে না।’
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগের জুমায় খতিবের দেওয়া বক্তব্যের জেরে ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী আব্দুল লতিফের সমর্থক বাবুল ফকির, কামরুল ফকিরের সঙ্গে জয়ী ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান গ্রুপের রবিউল ও বাচ্চু মল্লিক মসজিদেই কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে জুমা শেষে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ধারালো অস্ত্র নিয়ে একে অন্যের ওপর আক্রমণ করে। আহতদের মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথায় গুরুতর আহত লতিফ গ্রুপের বাবুল ফকিরকে খুলনা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন- শেখরা গ্রামের রুবেল মল্লিক, সোহেল শেখ, শওকত শেখ, রাসেল শেখ, রবিউল শেখ, সাইফুল শেখ, মাহতাব মল্লিক, সজিব মোল্লা, কামরুল ফকির, মল্লিক ইমামুল কবির, সোহেল মল্লিক, জাহাঙ্গীর মল্লিক, তৈয়ব আলী মল্লিক, আলম মল্লিক ও মহিউদ্দিন শেখ। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পরাজিত প্রার্থী আব্দুল লতিফের দাবি, ‘পূর্বপরিকল্পিতভাবেই আনিসুর রহমানের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাওয়া আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে। বাবুল ফকিরসহ আমার ১৩ জন বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।’
অপরদিকে, ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘মসজিদের মধ্যেই বাবুল ফকির, কামরুলসহ বেশ কয়েকজন আমার লোকজনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারমুখী আচরণ করে। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।’
বাগেরহাট মডেল থানার ওসি কে এম আজিজুর ইসলাম বলেন, ‘গত সপ্তাহে ইমাম বয়ান করেছিলেন, এই সপ্তাহে ব্যাখ্যা চাওয়ায় শেখরা জামে মসজিদের সামনে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। নামাজের পর উভয়পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে উভয় পক্ষের অনেকে আহত হয়েছেন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’