গত ৩১শে আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০টায় ফেনী মাস্টারপাড়াস্থ শ্রী শ্রী গুরুচক্র মন্দির প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ফেনী জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রিয়রঞ্জন দত্তের সভাপতিত্বে এবং জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শুকদেব নাথ তপনের পরিচালনায় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার শুরুতে জেলা শাখার সম্পাদক ফেনী জেলার সর্বত্র সংখ্যালঘুদের নীপিড়ননির্যাতনের এক দীর্ঘ বর্ণনা দেন। সভায় বক্তব্য রাখেন ডা. কান্তি বসাক, ভবতোষ বসাক, বিনোদ বিহারী নাথ, সন্তোষ বণিক, তুষার কান্তি বসাক, সোনা-গাজী ঐক্য পরিষদ সভাপতি মনিন্দ্র কুমার চৌধুরী, সম্পাদক রাধেশ্যাম দাস, দাগনভুঁঞা থানা শাখার সম্পাদক রশিক শেখর ভৌমিক, ফুলগাজী থানা শাখার গৌরী শঙ্কর নাথ, পরশুরাম থানা শাখার সম্পাদক  অ্যাডভোকেট সাধন মজুমদার, ফেনী সদর থানা সভাপতি ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ফেনী জেলা শাখার সভাপতি বিরাজ কান্তি মজুমদার, পৌর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলীপ সাহা, ছাত্র যুবঐক্যের আহ্বায়ক পরিমল বণিক, ফেনী জেলা আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হৃষিকেশ মজুমদার, মহিলা ঐক্য পরিষদ সম্পাদিকা সন্ধ্যা রানী দত্ত, জেলা কমিটির অন্যতম নেতা অমল বিশ্বাস, জেলা কোষাধ্যক্ষ রবিলাল সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব খগেশ দত্ত, জেলা ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা মনোরঞ্জন শীল প্রমুখ।

সভায় বক্তাগণ গত ১৭ই আগস্ট ফেনী জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় পীঠস্থান ফেনী মাস্টারপাড়াস্থ শ্রী শ্রী গুরুচক্র মন্দিরে অস্ত্র উদ্ধারের নামে বি ডি আর জুতা পরে মন্দিরে প্রবেশ করে মন্দিরে চিত্রপট ও অন্যান্য জিনিসপত্র তছনছ করে। মন্দিরের পবিত্রতা ক্ষুন্ন হওয়ায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এবং সংখ্যালঘুদের অস্ত্র উদ্ধারের নামে হয়রানি করার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। সভায় বক্তাগণ বলেন, স্বর্ণকার কালামের নেতৃত্বে বক্তা মুন্সি আনন্দিপুর, সন্ত্রাসী হাসিমের নেতৃত্বে মাছিমপুর, শহিদুল্লার নেতৃত্বে ধলিয়া দৌলতপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর মারধর, অস্ত্রের মুখে চাঁদা আদায়, বোমা ফাটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করছে। এরা একাধিক মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তাদের পুলিশ গ্রেফতার করছে না। সোনাগাজী সাতবাড়িয়া গ্রামেও সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘুদের ওপর একই কায়দায় চাঁদা আদায়, বোমা বিস্ফোরণ এবং মারধর করে। বিষয়টি সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাসীদের নামসহ লিখিতভাবে থানায় মামলা করার পরও কোন ফল পাওয়া যায়নি বরং মামলা করার আধঘণ্টার মধ্যে মামলার কাগজপত্র সন্ত্রাসীদের কাছে আসে এবং পরবর্তীতে গত ২৮শে আগস্ট পুনরায় তারা সাতবাড়িয়ায় হামলা চালায়। সাতবাড়িয়া গ্রামের ২০টি সংখ্যালঘু পরিবার গ্রাম ছেড়ে বর্তমানে সোনাগাজী বাজারে ও ফেনীতে অবস্থান করছে।

আনন্দিপুরের শিক্ষিকা সন্ধ্যা রানী নাথের স্বামী একমাস যাবৎ সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপন করে আছেন। সন্ত্রাসীরা সন্ধ্যা রানীর স্বামীকে না পেয়ে সন্ধ্যাকে মারধর করে। এছাড়াও দাগনভুঁঞার লতিফপুর গ্রামে পোদ্দার বাড়িতে সন্ত্রাসীরা ১৯শে আগস্ট রাতের অন্ধকারে ঢুকে ৩টি পরিবারের সর্বস্ব লুটপাট করে নিয়ে যায়। ১৮ই আগস্ট সিন্দুরপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে সুনীল মাস্টারের বাড়িতে ঢুকে সুনীল মাস্টারকে বেদম মারধর করে, অর্জুন বৈষ্ণবকে বোমা মেরে হত্যা করে এবং মূল্যবান স্বর্ণালংকার ও কাপড়-চোপড় নিয়ে যায়। এইসব সন্ত্রাসীর অত্যাচারে বাকসাম, নসরতপুর ও প্রতাপপুরসহ অধিকাংশ এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর বিরানভূমিতে পরিণত হয়।

সংবাদ, ৫ সেপ্টেম্বর ২০০১

কৃতজ্ঞতা: শ্বেতপত্র-বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১৫০০ দিন

মন্তব্য করুন