ব্লগার নাজিম উদ্দিন হত্যার ঘটনায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামের ৯ জঙ্গিকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
বর্তমানে অভিযুক্ত ৯ আসামির মধ্যে চার জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে, বাকি পাঁচ জন এখনও পলাতক।
বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) ঢাকার মূখ্য মহানগার আদালতে এই অভিযোগপত্র (নম্বর-১১৭) জমা দেওয়া হয়। সিটিটিসির উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অভিযোগপত্রে যে ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রাশিদ-উন নবী, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, আরাফাত রহমান ও মো. শেখ আব্দুল্লাহ গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। পলাতক আসামিরা হলো সেনাবাহিনী থেকে বহিস্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া, ওয়ালি উল্লাহ ওরফে ওলি, সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে কণিক, মাওলানা জুনেদ আহমেদ ওরফে জুনায়েদ ও আকরাম হোসেন।
সিটিটিসির উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্লগে লেখালেখি করার কারণে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা নাজিম উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা ও সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার পরিকল্পনায় নাজিম উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার হওয়া চার আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
তদন্ত সূত্র জানায়, নাজিম উদ্দিন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয় শেখ আব্দুল্লাহ, ওলি, নবী ও কণিক। এছাড়া আরও দুই-তিন জনের সাংগঠনিক নাম জানা গেলেও তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তা। গ্রেফতার হওয়া আরাফাত ও সায়মন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ইন্টেল টিমের হয়ে কাজ করতো। তারাই নাজিম উদ্দিনের বিস্তারিত পরিচয় জানার পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের আগে রেকি করাসহ হত্যায় সহযোগিতা করে। নাজিম উদ্দিনকে হত্যার পুরো পরিকল্পনা করেছিল বহিষ্কৃত মেজর জিয়া।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নাজিম উদ্দিন হত্যার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে আকরাম, আরাফাত ও সায়মন অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত। শেখ আব্দুল্লাহ ও জুনায়েদ জুলহাজ-তনয় হত্যার সঙ্গে জড়িত। জুনায়েদ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিল।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় মেসে ফেরার পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে জঙ্গিরা কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে ব্লগার নাজিম উদ্দিনকে। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় প্রথমে থানা পুলিশ এবং পরে মামলাটি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৩ সাল থেকে আল-কায়েদার অনুসারী জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম একাধিক অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, ব্লগার, লেখক ও প্রকাশককে টার্গেট করে হত্যা করে। এরই ধারাবাহিকতায় জঙ্গিরা নাজিম উদ্দিনকে হত্যা করে।