কক্সবাজারের চকরিয়ায় ইয়াবা কারবারের সহযোগী না হওয়ায় এক গার্মেন্টকর্মীকে বিবস্ত্র করে শারিরিক নির্যাতনের সময় ধারণ করা ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।

 

অভিযুক্তের নাম মোহাম্মদ সোহেল ওরফে ডাক্তার সোহেল। সে উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নে দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পশ্চিম নতুন ঘোনার মৃত আবদুল হকের ছেলে।

অভিযোগে জানা গেছে, কোনাখালী ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেলের সঙ্গে খালাতো বোন আয়েশা আক্তার নামের এক নারীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই অবস্থায় ওই নারী সোহেলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রেখে পেকুয়ার উজানটিয়া ইউনিয়নের নূরীরপাড়ার মো. আরিফ নামের অপর এক গার্মেন্টকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সম্পর্কের আড়াইমাস না যেতেই ওই নারী আরিফকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান গার্মেন্টকর্মী আরিফ। কিন্তু ওই নারী আগের প্রেমিক খালাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা সোহেলকে অসৎ উদ্দেশ্যে বিষয়টি জানান। এরপর সোহেল ঢাকায় অবস্থানকালে ফোন করে গার্মেন্টকর্মী আরিফকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে একটি হোটেলকক্ষে আটকে রেখে বিবস্ত্র করে শারিরিক নির্যাতন চালান। বিবস্ত্র অবস্থায় গলায় জুতার মালা পরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় আরিফের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা, সঙ্গে থাকা মোবাইলসহ সবকিছু। এ ছাড়াও জোরপূর্বক ননজুডিসিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়াসহ ভবিষ্যতে আয়েশার সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ করবে না মর্মে মুচলেকাও আদায় করেন সোহেল। সেই মোতাবেক নির্যাতন সহ্য করেও ওই নারীর সাথে আর যোগাযোগ রাখেননি গার্মেন্টকর্মী আরিফ।

কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল নিজের ধারণকৃত সেই বিবস্ত্র ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রতিনিয়ত টাকা আদায় করতে থাকেন আরিফের কাছ থেকে। আরিফও নিজের সম্মানের দিকে চেয়ে প্রতিনিয়ত টাকা দিয়ে আসছিল সোহেলকে। ভুক্তভোগী আরিফ অভিযোগ করে বলেন, গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে সোহেল ফোন করেন তাকে। এ সময় সোহেল গার্মেন্টকর্মী আরিফকে প্রস্তাব দেন, তাঁর সাথে ব্যবসা করতে। কীসের ব্যবসা জানতে চাইলে সোহেল বলেন, প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে। বিপরীতে ঢাকা, গাজীপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইয়াবার চালান নিয়ে যেতে হবে।

আরিফ বলেন, সোহেলের এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, প্রায় তিনবছর আগে ধারণকৃত আমার বিবস্ত্র ভিডিওচিত্র ইংরেজিতে ‘টাইমস অব চকরিয়া নিউজ’ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে সম্প্রতি শেয়ার করেন। অমানুষিক নির্যাতনের এই ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ভুক্তভোগী আরিফ বলেন, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ায় আমি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাও করতে পারছি না। আমার মান-সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল। এনিয়ে প্রথমে চকরিয়া থানায় গেলেও ঘটনাস্থল চকরিয়ায় না হওয়ায় অভিযোগ দিতে পারিনি। এরপর এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেকুয়া থানায় দিয়ে আসি। সেই অভিযোগটি পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী আবুল বাশার তদন্ত করছেন।

এ বিষয়ে পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী আবুল বাশারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি এখনকার ঘটনা নয়। তবে অভিযোগটি পাওয়ার পর গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।

কালের কণ্ঠ

মন্তব্য করুন