কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চাঁদপাড়া গ্রামের বিমল চন্দ্র ঘরামিকে(৬০) দেশছাড়া করার হুমকি দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তার ক্ষেতের ধান কেটে নিয়েছে। তার ঘরে আগুনও দিয়েছে তারা। মারধর করে তার দোকানের কর্মচারীদের তাড়িয়ে দিয়ে লুট করেছে মালামাল। শুধু তাই নয় ছেলেকেও করেছে অপহরণ। কলাপাড়া নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চাঁদপাড়া গ্রামের অধিবাসীরা জানান, বিমল ঘরামি পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত বাপ-দাদার ভিটায় যুগ যুগ করে বাস করে আসছেন। স্থানীয় বিএনপির এক প্রভাবশালী ব্যক্তি বিমল ঘরামির ৭ একর ৫২ শতাংশ ফসলি জমির জাল-কাগজ তৈরি করে তা দখল করে নেন। প্রতিবছর বিমল ঘরামি ওই জমি চাষ করলেও সংশ্লিষ্ট বিএনপি নেতা জমির ধান কেটে নিয়ে যান সন্ত্রাসীদের দিয়ে। বছরের পর বছর ধরে জমির ধান নিজের ঘরে তুলতে না পেরে উপায়ান্তর না দেখে সংসার চালানোর স্বার্থে ওই গ্রামের ‘কালভার্টের’ কাছে একটি মুদি মনোহারি দোকান খুলে বসেন বিমল ঘরামি। এদিকে বিমলকে গ্রামছাড়া করার উদ্দেশ্যে প্রভাবশালী ওই বিএনপি নেতার নির্দেশে গত ৯ জুলাই দোকানে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় বিমলের একমাত্র ছেলে সঞ্জিত চন্দ্র ঘরামিকে(২৭) অপহরণ করে নিয়ে যায় একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিমল ঘরামি কলাপাড়া থানায় পরের দিনই ‘জিডি’ করে (জিডি নম্বর ৩৫৬)। জিডি করার পর ৪ মাস অতিবাহিত হলেও বিমল ঘরামি তার ছেলের কোন সন্ধান না পেয়ে দিশেহারা। থানায় ‘জিডি’ করায় প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৬ জুলাই রাতে দোকানের দুই কর্মচারীকে বেঁধে সেখানে রাখা সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। বিমল ঘরামি বাদি হয়ে এ ব্যাপারে কলাপাড়া থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। এতে বিএনপি নেতা আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে গত ১ অক্টোবর নির্বাচনী ফলাফলের খবর বিএনপির পক্ষে আসছে শুনে রাতের বেলা দোকানঘরটি জ্বালিয়ে দেন। বিমলের অপরাধ সে নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ‘আসামিরা থানার সামনে দিয়ে প্রকা ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। উল্টো আসামিরা ছেলেকে ফিরে পেতে হলে মামলা তুলে নিয়ে সর্বশান্ত বিমল ঘরামিকে দেশছাড়ার হুমকি দিচ্ছে।’ বিমল ঘরামি এই প্রতিনিধিকে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান,‘আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। পৈত্রিক ভিটেতে বসবাস করে এ দেশে থাকতে চাই। দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে এ বৃদ্ধ বয়সে কি করবো? না খেয়ে মরতে হবে। আমি বাঁচতে চাই। আমাকে আপনারা বাঁচান।‘
সংবাদ, ৯ নবেম্বর ২০০১