কুলাউড়া থেকে চিকিৎসা করিয়ে পাঁচ বছরের শিশুসন্তান খ্রিস্টিনা খংলাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কুকিজুরির বাসিন্দা খাসি সম্প্রদায়ের রাজ নংরুম। সঙ্গে ছিলেন মুরইছড়া পুঞ্জির মান্দি (গারো) তরুণ উজ্জ্বল এম সাংমা। সামাজিক বনায়নের সুবিধাভোগী কয়েকজন বাঙালি তাদের ওপর হামলা চালিয়ে দু’জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন।

 

২৭ আগস্ট শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া ৪নং গেইট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে দুপুরে একই স্থানে বাঙালি ও আদিবাসী- দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে লংলা পাহাড়ে বসবাসরত খাসি সম্প্রদায়ের পানের জুম দখল নিয়ে সামাজিক বনায়নের সুবিধাভোগীদের খাসি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। শুক্রবার দুপুরে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা জোর করে ঢলুছড়ার পানজুমে ঢুকে পান উঠাতে থাকেন। এ সময় পাহারারত খাসিরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করেন। পাহাড়ে বাঙালি বনায়নের উপকারভোগী পাহারাদার স্থানীয় টাট্টিউলী গ্রামের বাসিন্দা ছুরক মিয়া ও আছকির আলীর ওপর হামলা হয়েছে- এমন খবরে মুরইছড়া বাগানের রাস্তা সম্মুখের উপকারভোগীরা জড়ো হলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বেধে যায়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৯ জন আহত হন। খাসিদের অভিযোগ, মূলত ডলুছড়া ও বেলুয়া পুঞ্জি থেকে তাদের ভূমি বেদখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে বেলকুমা পুঞ্জির লিভিংস্টোন ইয়ংনিয়ং, লেবেলসন খংজ, ফিডালিয়া লামিন চিকিৎসা শেষে পুঞ্জিতে ফেরার পথে মুরইছড়া ৪নং গেইট এলাকায় উপকারভোগীদের হামলায় কুকিজুরী পুঞ্জির বাসিন্দা সিল পলং ও রেডিমার ছেল্লাকে মারধর করা হয়। একই স্থান দিয়ে যাওয়ার পথে বাঙালিদের হামলার শিকার হন রাজ নংরুম ও উজ্জ্বল এম সাংমা।

স্থানীয় উপকারভোগী আছকির আলী ও ইসরাইল মিয়া জানান, বনবিভাগ থেকে তারা লিজ এনে দীর্ঘদিন থেকে সামাজিক বনায়ন করে আসছেন। কিন্তু খাসিরা নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস না করে পুরো পাহাড়ে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।

আদিবাসী নেত্রী ফ্লোরা বাবলী তালাং বলেন, খাসিরা পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসলেও আজও ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে খাসিদের পানজুম অবাধে কাটা হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের লোকজনকে যাতায়াতের সময় রাস্তায় অতর্কিত হামলা করা হচ্ছে।

কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ রায় বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, উভয়পক্ষকে নিয়ে স্থানীয় মুড়ইছড়া বাজারে বৈঠক হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে আমরা স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছি।

সমকাল

মন্তব্য করুন