কুড়িগ্রামের উলিপুরে দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা ও নারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে শতাধিক নারী-শিশু-পুরুষ উপজেলা সদরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

 

২৬ মে বুধবার উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমি ও গৃহপ্রদান আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় উলিপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৫০টি গৃহ নির্মাণের বরাদ্দ আসে। সে মোতাবেক প্রথম পর্যায়ে ২০০ গৃহের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। বর্তমানে ১৫০টি গৃহ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের শতাধিক ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

উপজেলার ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ির দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্ক চন্দ্র মহন্ত (৬৫) বলেন, ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের তৎকালীন জোতদার ব্রজেন্দ্রলাল মুন্সির দানকৃত ১৮ একর দেবোত্তর সম্পত্তিতে শ্রীশ্রী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির ও রাধা গোবিন্দ জিউ মন্দির রয়েছে। সেখানে আমরা দীর্ঘদিন থেকে পূজা অর্চনা, প্রসাদ বিতরণ, সেবায়েতের ভরণপোষণ, মন্দিরের সংস্কারসহ সার্বিক ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি। তিনি দাবি করেন এ জায়গা দেবোত্তর সম্পত্তি।

তিনি আরও বলেন, কিছুদিন থেকে উপজেলা প্রশাসন দেবোত্তর সম্পত্তিকে সরকারি খাসজমি দাবি করে সেখানে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য শতাধিক গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যেই অর্ধেক গৃহের কাজ সমাপ্ত করেছেন। মন্দির সংলগ্ন জমিতে আমরা প্রতি বছর অষ্টপ্রহর ও নামকীর্তন করে আসছি। সেই জমিতে গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করলে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় এতে বাধা দেয়।

এ বিষয়টি নিয়ে ১০-১২ দিন থেকে উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে একাধিকবার এসে মিটিং করে মন্দির সংলগ্ন জায়গায় গৃহ নির্মাণ করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

বুধবার সকালে দেবোত্তর সম্পত্তিতে পুনরায় গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-শিশু ও পুরুষ সকলে মিলে এতে বাধা প্রদান করেন। এ সময় গৃহ নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা কয়েকজন নারীদের ওপর হামলা চালায়।

হামলার শিকার জবা রানী (২৬) ও দিপ্তী রানী (৩০) অভিযোগ করে বলেন, মন্দিরের জমি রক্ষার দাবিতে আমরা ঘর তুলতে বাধা দেয়ায় উপস্থিত প্রশাসনের সামনে মুক্তা ও তার লোকজন আমাদের গায়ে হাত দেয়। এ সময় তারা আমাদের পড়নের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে ও মারপিট করে হাতের আঙ্গুলসহ বিভিন্ন জায়গায় জখম করে।

তারা আরও বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় প্রতিবেশী রাসেল মিয়ার ওপরও তারা হামলা করে। ঘটনার প্রতিবাদে আমরা বুধবার বিকালে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করতে গেলে সেখানেও তারা আমাদের ওপর আক্রমণ করেন। এ ঘটনায় এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

ওই এলাকার মায়া রানী মহন্ত (৩০), সেলি রানী সরকার (৫০), সেফালী রানী গোস্বামী (৪৫), সুধা রানী মহন্ত (৩০) ও মন্দিরের পূজারী রতন মহন্ত (৩২) জানান, দেবোত্তর সম্পত্তিতে পূর্বেও তারা ৫০টির অধিক গৃহ নির্মাণ করেছে। বর্তমানে মন্দির সংলগ্ন জমিতে তারা গৃহ নির্মাণ করার সামগ্রী ইট-বালু এনে ফেলেছে। এতে আমরা আপত্তি করলে উপজেলা সদর থেকে মুক্তার নেতৃত্বে একদল যুবক এসে মহিলাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা ও হামলার বিচার প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাই।

কেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান? জানতে চাইলে তারা বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সামনেই আমাদের ওপর হামলা হলেও তারা বাধা দেয়নি।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ উলিপুর উপজেলা শাখার সভাপতি সৌমেন্দ্র প্রসাদ পাণ্ডে গবা জানান, ওই সম্পত্তি ইতোপূর্বে সরকার খাস খতিয়ানে নেয়ায় সেখানে সামান্য কিছু দেবোত্তর সম্পত্তি রয়েছে। মন্দির সংলগ্ন জমিতে যাতে গৃহ নির্মাণ না হয় সে বিষয়ে আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের সদস্য সচিব সিরাজউদ দৌল্লা বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তিতে গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে না। মন্দির সংলগ্ন জায়গায় গৃহ নির্মাণ করা হয়নি। ভূমি অফিস কর্তৃক দেয়া সরকারের খাস জায়গায় গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। জায়গাগুলো পূর্বে দেবোত্তর সম্পত্তি ছিল।

তিনি আরও বলেন, নির্মাণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজন দেবোত্তর সম্পত্তি দাবি করে তা ভেঙে দেন। এ সময় আমাদের পক্ষ থেকে দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা মুক্তা নামের একজন বাধা দিলে তার ওপর হামলা চালানো হয়।

মুক্তার লোকজন কর্তৃক মহিলাদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা সঠিক নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকল্পের সভাপতি নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, সেখানে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। যারা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারাই গৃহ নির্মাণের কাজের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা হিন্দু সম্প্রদায় নেতাদের সঙ্গে দ্রুত বসব।

উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ কবীর জানান, মন্দির এলাকায় সরকারি ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হলেও এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন