চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা শাখা যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। তারা হামলার জন্য সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারীদের দায়ী করেছে। সাংসদের নির্দেশেই এই হামলা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
সোমবার (২৪ আগস্ট) সকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত সচিব তাজুল ইসলাম এবং সাংসদের অনুসারী বাঁশখালীর পৌর মেয়র শেখ সেলিমুল হককে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বাঁশখালীতে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে সকাল ১১টার দিকে মানববন্ধন শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমেদ। এছাড়া আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সন্তান কমান্ডের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু।
মানববন্ধন শুরুর আনুমানিক পৌনে একঘণ্টা পর ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে মানববন্ধনে হামলা করে। হামলার সময় মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে স্লোগান দিতে শোনা যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় জামালখান এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীরা ছুটতে শুরু করেন। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ঘটনাস্থলে তখন ৩-৪ জন পুলিশ ছিল। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটক করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সদস্য সরওয়ার আলম মণি সারাবাংলাকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘এমপির নামে স্লোগান দিতে দিতে অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা করে। তারা মাইক ভেঙে ফেলে। লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এতে মুক্তিযোদ্ধা, সন্তান কমান্ডের সদস্য, সাংবাদিকসহ অন্তঃত ১২ জন আহত হয়েছেন।’
বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী এই হামলা করেছে বলে অভিযোগ সরওয়ার আলমের।
হামলায় আহতদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ, আবুল হাশেম, আবু তাহের, আজিমুল ইসলাম ভেদু ও আব্দুর রাজ্জাক, বাঁশখালীর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফের ছেলে জহির উদ্দিন বাবর ও জয়নাল আবেদীন, সাহেদ মুরাদ সাকু, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ ও চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাপারসন মো. নবাব আছেন। বাবর ও নবাবের মাথা ফেটে গেছে।
এদিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর মাইক ঠিক করে সংক্ষিপ্ত আকারে সমাবেশ হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মহানগরের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, সন্তান কমান্ডের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু বক্তব্য রাখেন। এরপর হামলার প্রতিবাদে তারা মিছিল বের করে।
সাহেদ মুরাদ সাকু জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় তারা মামলা করবেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে প্রেসক্লাবের সামনে আবারও সমাবেশর ডাক দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মারামারির ঘটনা শুনে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার বিষয়ে এখনেও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য এমপি মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত সচিব তাজুল ইসলামের মোবাইলও বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঁশখালী পৌর মেয়র শেখ সেলিমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মারামারি করতে যাইনি। আমরা তাদের কাছে সত্য কথা বলতে গিয়েছিলাম। আমরা হামলা করিনি। তারাই আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাকে কিল-ঘুষি দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ গত ২৬ জুলাই মারা যান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ দেওয়া মৌলভী সৈয়দের ভাই। আলী আশরাফের মারা যাবার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেওয়ার অভিযোগ আছে। এর মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফকে নিয়ে স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান বিতর্কিত মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।