বৌদ্ধ ভিক্ষু জ্ঞানজ্যোতি মহাস্থবিরকে হত্যার প্রতিবাদে এবং প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি প্রদানের দাবিতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাউজানের অনাথ আশ্রম অভিমুখে একটি পদযাত্রা বের করা হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ এই পদযাত্রার আয়োজন করে। তবে এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাউজানের আরো একটি বৌদ্ধ বিহারে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আবুরখীল দক্ষিণ ঢাকাখালি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত জীনপ্রিয় মহাথেরোকে লাঞ্ছিত করে এবং বন্দুকের নল ঠেকিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ শনিবার রাউজানের ওয়ারাপুঞা বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শনে যাচ্ছেন। আগামীকাল রোববার আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বেও একটি দল আশ্রমটি পরিদর্শনে যাবেন। ঐক্যপরিষদের পদযাত্রাটি বিকেল ৩টায় নগরীর এনায়েত বাজার বৌদ্ধ মন্দির থেকে শুরু হয়ে প্রথমে প্রেসক্লাব পর্যন্ত যায় এবং সেখান থেকে ৮টি বাস ও ১০টি মাইক্রোবাস যোগে পদযাত্রার বহরটি সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাউজানের ফকিরহাটে গিয়ে পৌঁছে। এরপর পুনরায় পদযাত্রা শুরু হয় এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওখান থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে হিঙ্গলা নামে ভিক্ষু প্রতিষ্ঠিত অনাথ আশ্রমে গিয়ে শেষ হয়। রাউজানের আবুরখীল জনকল্যান সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা নাগাদ ১০-১২ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদল আবুরখীল গ্রামে নিরীহ জনসাধারণের ওপর হামলা চালিয়ে চারটি দোকান থেকে ২০ হাজার টাকা লুট করে। সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ ঢাকাখালি গৌতম বিহারে হানা দিয়ে বিহারের অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে এবং তার বুকে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে তার পকেটের টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসীরা ভিক্ষুকে লাঞ্ছিত করার সময় নৌকায় ভোট দিয়েছে কেন জানতে চায় এবং আশপাশের লোকজনকে ভিক্ষু জ্ঞানজ্যোতির পোস্টার লাগানোর জন্য শাসিয়ে যায়। এর ফলে এলাকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের পদযাত্রা শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জ্ঞানজ্যোতি ভিক্ষুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত কেউ এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় পরিষদ নেতৃত্ববৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তার পরিবারকে পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন। পদযাত্রায় ঐক্যপরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ববৃন্দ ছাড়াও প্রায় অর্ধশত ভিক্ষু যোগ দেয়। কয়েকশ’ লোকের এই পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন ঐক্যপরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ভদন্ত বোধিপাল মহাথেরো, ভদন্ত সুমঙ্গল মহাথেরো, এডভোকেট সিরিল শিকদার ও ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক। এছাড়া বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা ড. জিনবোধি ভিক্ষু, ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, সাংবাদিক মুহম্মদ ইদ্রিস, তাপস হোড় প্রমুখ সঙ্গে ছিলেন। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ গতকাল সকালে ভিক্ষু হত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু নিরাপত্তা পরিষদ আজ প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ২টায় এক মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

ভোরের কাগজ, ৪ মে ২০০২

মন্তব্য করুন