নির্বাচনোত্তর হামলার শিকার হয়ে গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর প্রভৃতি এলাকা থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীলে আশ্রয় নেয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। শুক্রবার সকালে এসব লোকজনকে বাড়িঘরে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য গোপালগঞ্জ এবং বরিশালের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হলেও প্রশাসনের উপর ভরসা না পেয়ে তারা কেউ বাড়িঘরে ফিরে যায়নি। তবে দুই জেলার জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এখনও এসব ভীত সন্ত্রস্ত নারী-পুরুষকে বাড়িঘরে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার সকালে তাদেরকে ফেরত দেয়ার জন্য উভয় জেলার ডিসি ও এসপি রামশীল ও পয়সার হাটে অপেক্ষা করতে থাকেন; কিন্তু সহিংসতার শিকার ও নিরাপত্তাহীন এসব লোকজন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হতে না পেরে রামশীল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতেই থেকে যান। তারা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছেন, আগৈলঝাড়া সহ বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৪/৫’শ লোককে আসামি করা হয়েছে। বাড়িতে ফিরে গেলে পুলিশি হয়রানির মধ্যে পড়তে হবে বলে তাদের মধ্যে আশংকা বিরাজ করছে। একদিকে সন্ত্রাসীদের নিপীড়ন-নির্যাতন, হুমকি ও চাঁদাবাজি অন্যদিকে পুলিশি হয়রানি-এই দ্বিমূখি ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত, এসব নারী-পুরুষ নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে চাচ্ছে না। তাদেরকে গ্রেফতার করতে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ রামশীলে হানা দিচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেছে। তারা এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও জানমালের নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা না পেলে বাড়িঘরে ফিরে যাবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া থেকে নির্বাচিত এমপি জহির উদ্দিন স্বপন অথবা আগৈলঝাড়া থানা যুবদল সভাপতি আবুল হোসেন লাল্টু এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই তারা বাড়িঘরে ফিরে যাবে বলে উল্লেখ্য করেছে।
খুলনা থেকে ১ শ কিলোমিটারেরও বেশী দূরে অবস্থিত রামশীল ইউনিয়ন সদরে গতকাল দুপুরে সরজমিনে গিয়ে অনেক সংখ্যালঘু নারী-পুরুষকে দেখা যায়। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জয়শিরকাঠি গ্রামের জ্ঞানেন্দ্র মজুমদার জানান, সন্ত্রাসের কারনে তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ভোট দিতে পারেনি। তিনি একা ভোট দিলেও শেষ পর্যন্ত বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
গৌরনদী উপজেলার বাটাজোড় গ্রামের সমীরণ চক্রবর্তী বলেন, তার স্টুডিওটি নির্বাচনের পরেই ভাংচুর করা হয়। এছাড়া ১লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সন্ত্রাসীরা বলেছে, টাকা না দিলে এলাকায় থাকতে পারবেনা। এ কারণেই তিনি পালিয়ে এসেছেন। আগৈলঝাড়া উপজেলার কোদালদোয়া গ্রামের উষা ওঝা বলেন, তারা আমার দুই ছেলের নামে মামলা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইউপি সদস্য শেফালী সরকার অভিযোগ করেন, নির্বাচনের পরের দিন ভোরে সন্ত্রাসীরা তাকে অস্ত্রসহ ঘিরে ফেলে এবং ১লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এসময় তারা মারধরও করে।
সংবাদ, ১৩ অক্টোবর ২০০১