ডোমের ছেলে হয়ে বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের মেয়েকে বিয়ে করায় সমাজের মাতবরদের হেনস্তার শিকার হচ্ছেন হৃদয়-রিতা দম্পতি।

পবিত্রতার কথা বলে প্রকাশ্যে পরপুরুষদের সামনে নববধূর শরীরে ছিটানো হয়েছে বাংলা মদ। একঘরে করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে মানসিক নির্যাতন। শালিস বসিয়ে করা হয়েছে জরিমানা।

হৃদয়কে ২০ দিনের মধ্যে সারাদেশের ডোম সমাজের লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর নির্দেশও দিয়েছেন ডোমের সমাজপতিরা।

ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার স্টেশন সংলগ্ন মাছের আড়তপট্টি এলাকায়। গত ২৩ মার্চ রাত ৯টার দিকে সালিশ বসিয়ে এ নির্দেশ দেন ডোম সমাজের মাতবররা।

সালিশের নামে নারীর এমন হেনস্তা ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ এবং নির্যাতিত পরিবারের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশন।

এ দাবিতে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন ফেডারেশনের নেতারা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অভিযোগকারীরা
আবেদনপত্রসহ আমার কাছে এসেছিলেন। আমি আবেদনটি শনিবার পুলিশ সুপারের কাছে পাঠাচ্ছি। তিনি যাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসিকে দিয়ে এটা তদন্ত করেন। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওই আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গার সাতগাড়ী এলাকার বিরু ডোমের ছেলে হৃদয় ডোম মাস দুয়েক আগে বড়বাজার মাথাভাঙ্গা ব্রিজ এলাকার কালীচরণের মেয়ে রিতা বাঁশফোড়কে বিয়ে করেন।

ডোমের ছেলে হয়ে বাঁশফোড় সমাজের মেয়েকে বিয়ে করায় ডোম সমাজের জাত গেছে বলে অভিযোগ তুলে বিচারের আয়োজন করেন মাতবররা।

হৃদয় ডোমের পরিবারকে একঘরে করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গত ২৩ মার্চ সালিশ বসান রতন, দুখু, চলুয়া, ভুটকা, বাদল হিরু ডোমসহ ডোম সমাজের সমাজপতিরা।

সালিশে নববধূ রিতাকে বাঁশফোড় সম্প্রদায় থেকে ডোম সমাজে রূপান্তরিত করে পবিত্র করার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ মোতাবেক ৫০-৬০ জন পুরুষের সামনে নববধূ রিতা বাঁশফোড়ের শরীরে বাংলা মদ ঢেলে দেন তারা।

শুধু তাই নয়, বিচারে হৃদয় ডোমের পরিবারকে নগদ ছয় হাজার টাকা জরিমানা, আগামী ২০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের সব ডোম সম্প্রদায়ের লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর নির্দেশ এবং নববধূ রিতা বাঁশফোড় তার বাবার বাড়িতে গেলেও কোনো প্রকার খাদ্য খেতে পারবে না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশনের নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান যুগেও সমাজপতিদের এ ধরনের বিচার মেনে নিতে হচ্ছে। তবে যুবসমাজের অনেকেই জাতে তোলার নামে হেনস্তা করার বিষয়টির প্রতিবাদ করতে চায়। ইচ্ছে থাকলেও তারা সমাজপতিদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারেন না।

কেননা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই সেই পরিবারকে একঘরে করে রাখা হবে। ফলে সমাজপতিদের অন্যায় অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

হৃদয়-রিতা দম্পতির বিয়ের ঘটনায় সমাজপতিদের সালিশের অন্যায় রায় বাতিলসহ আগামীতে বিচারের নামে যেন কোনো নারী বা কোনো পরিবারকে হেনস্তা-অপমানের হাত থেকে রক্ষা করতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন জানানো হয়।

একইসঙ্গে সমাজপতিদের সালিশ পরিচালনা বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান বাংলাদেশ জয়ভীম ছাত্র-যুব ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন