বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে বহু সংখ্যালঘুর নীরবে দেশ ত্যাগের ঘটনা ঘটতে পারে। ইতোমধ্যে অনেকেই ভিটেমাটি ছেড়েছেন। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেশ ত্যাগের ঘটনা অব্যাহত থাকতে পারে । আর এ কারণে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। ১অক্টোবর নির্বাচনের পর পরই দেশ জুড়ে এক অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়। টার্গেট করা হয় সংখ্যালঘুদের। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হতে থাকে শত শত সংখ্যালঘু। রাষ্ট্রের সমর্থন না থাকলেও সংখ্যালঘুদের শক্সকাকে কাজে লাগিয়ে একটি মহল বাড়তি ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। এই অবস্থায় নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক সংখ্যালঘু বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতে চলে যায়। সরেজমিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু সংখ্যালঘু গ্রাম ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। আরও জানা গেছে, অনেকে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। তারাও গ্রাম ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার সংখ্যালঘু গ্রাম বাদুরগাছা। এই গ্রামের আড়াই’শ পরিবারের প্রায় ৯শ’ হিন্দু সংখ্যালঘু বসবাস করছে দীর্ঘদিন ধরে। নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসের কারনে এ গ্রামের বিধান, হারাধন, কমলেশ, দীপঙ্কর, প্রকাশ, মহাদেব, বাবু, ট্যাঁপা, বৈকুন্ঠ, প্রদীপ, শান্তি, রঘুনাথ ছাড়াও আরও কয়েকজন গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। নিতাই বিশ্বাস স্ত্রী তিন ছেলেসহ বাড়ি ফেলে চলে গেছে। এ গ্রামের বৃদ্ধ শক্তিপদ জানালেন, প্রতিবেশীরা চলে যাওয়ায় তারা আরও বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে শেষ পর্যন্ত তারা কোথায় দাঁড়াবেন তা বলতে পারেননি। জেলার তাওপুর গ্রামে হিন্দু-মুসলমান শত শত বছর ধরে এক সঙ্গে বসবাসকরছে। কিন্তু নির্বাচনের পর হিন্দুদের ওপরে হামলার ঘটনায় গ্রামের রতন, সাধন , সুফল, কুমার, বিমল, স্বপন ছাড়াও আরও কয়েকজন গ্রাম ছেড়েছে। এ গ্রামে ৪০টি হিন্দু পরিবার বসবাস করে। এদের মোড়ল গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন দালানবাড়ির মালিক দীনবন্ধু (৫৫)। নির্বাচনের পর তিনি মার খেয়েছেন। তাঁর ভাই চিত্তরঞ্জনসহ আরও কয়েক জনকে মারধর করা হয়েছে। দীনবন্ধু সাহস করে থানা পুলিশ করেননি। দীনবন্ধু বলেন, যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমরা ভয়ে ভয়ে আছি। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শেষ পর্যন্ত গ্রাম ছাড়তে হবে। দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের সংখ্যালঘু গ্রামগুলোর একই চিত্র। জানা যায়, এ অঞ্চলে ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু রয়েছে। ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী ও রাজাকারের অত্যাচারে বেশ কিছু সংখ্যালঘুর দেশ ত্যাগের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নীরবে দেশত্যাগের এই সঙ্কট জটিল হয়ে উঠতে পারে। ইতোমধ্যে ভারত সরকার অনুপ্রবেশ রোধের জন্য সীমান্তে কড়াকড়ি অরোপ করে। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছে। এ কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সচেতন মহল মনে করে, নীরব দেশ ত্যাগ রোধের জন্য জরুরী ভিত্তিতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
দৈনিক জনকন্ঠ, ১১ অক্টোবর ২০০১