ধামরাইয়ে একজন বিএনপি নেতার ছত্রছায়ায় একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী শিবমন্দিরের সম্পত্তি দখল করেছে এবং থানার নির্দেশ অমান্য করে সেখানে ঘরবাড়ি তুলছে। সন্ত্রাসীরা এলাকার কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারকে দেশছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। সম্পত্তি দখলের ঘটনায় থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে অভিযোগ সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করেছে। ধামরাই থানাধীন রোয়াইল গ্রামে গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন জমিদার সমরেন্দ্র ও সুমেন্দ্র মোহন রায়ের প্রতিষ্ঠিত রোয়াইল শিবমন্দিরসহ ৬ শতাংশ সম্পত্তিই দেবত্তোর সম্পত্তি। ওই মন্দিরের মধ্যেই রয়েছে জমিদারদের স্থাপিত ৬০ ফুট উঁচু একটি মঠ। পূর্বে একটি সন্ত্রাসীচক্র ওই মঠের চূড়া, ত্রিশুল ও রূপার কলস চুরি করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হলেও পুলিশ তা উদ্ধার করতে পারেনি। জানা যায়, গত শুক্রবার সকালে নাজিমউদ্দিন ও কলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ওই চক্রটি কয়েকশ মানুষের উপস্থিতিতে মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করে নেয়। এ সময় মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ গোপাল সাহা বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে দেশছাড়া করার হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে তিনি ওই দিনই এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু থানা পুলিশ তার অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড না করে তা সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করে। এদিকে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান গত রোববার উভয়পক্ষকে সম্পত্তিতে কোনো কাজ না করার নির্দেশ দিয়ে সম্পত্তির কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মন্দির কমিটির লোকজন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে থানায় উপস্থিত হন। কিন্তু কাগজপত্র না দেখে ওসি মন্দির কমিটির লোকজনকে আশ্বাস দিয়ে জানান, বিএনপির একজন নেতা ঘটনাটি মীমাংসা করবেন। কিন্তু স্থানীয় বিএনপির ওই প্রভাবশালী নেতা থানার নির্দেশ অমান্য করে দখলকৃত সম্পত্তিতে সন্ত্রাসীদের ঘর তোলার নির্দেশ দেন। গতকালও সন্ত্রাসীরা দখলকৃত দেবোত্তর সম্পত্তিতে ঘরবাড়ি তোলার কাজ চালায়। এ ঘটনায় ওই এলাকার ২৬২টি সংখ্যালঘু পরিবারের প্রায় দেড় হাজার সদস্যের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে সন্ত্রাসীরা ওই পরিবারগুলোকে বিভিন্নরকম হুমকি দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সংখ্যালঘু মহিলা জানান, সন্ত্রাসীরা এতই প্রভাবশালী যে, তারা যেকোনো সময় তাদের পরিবারের ওপর হামলা চালাতে পারে। এ ব্যাপারে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, দখলের ঘটনাটি তিনি তদন্ত করছেন। তবে মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি সঠিক নয়। তিনি জানান, উভয় পক্ষের আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে বিধায় মামলা নেওয়া হয়নি।

প্রথম আলো, ১২ জুন ২০০২

মন্তব্য করুন