নওগাঁর পত্নীতলায় পারিবারিক সমস্যা সমাধানের নামে থানায় নিয়ে এসে হামিদুর রহমান (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে নির্যাতনের মাধ্যমে প্রথমে আহত করে পরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে থানার ওসি সামসুল আলম শাহের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় মৃতের স্বজনরা ওসির বিচার দাবিতে লাশ নিয়ে পত্নীতলা থানা চত্বরে অবস্থান করেন। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নওগাঁ মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ বুধবার বিকালে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বোরাম গ্রামের মৃত খোদা বক্সের পুত্র হামিদুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রী ফাহিমার পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এতে হামিদুর কয়েকদিন পূর্বে তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এ ঘটনায় হামিদুরের ২ ছেলে তাকে মারধর করলে তিনি থানায় অভিযোগ করেন। ১৭ এপ্রিল থানায় এক সমঝোতা বৈঠকে হামিদুর তার স্ত্রীকে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।

২৫ এপ্রিল হামিদুরের স্ত্রী ফাইমা থানায় গিয়ে অভিযোগে জানান, তার স্বামী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাকে এখনও গ্রহণ করেননি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একই তারিখে এসআই আশরাফুল ইসলাম সমঝোতার কথা বলে হামিদুরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় থানায় ফাহিমা ও হামিদুরের স্বজন ও প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমঝোতা বৈঠকে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ওসি সামসুল আলম শাহ ক্ষিপ্ত হয়ে হামিদুরকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি এবং লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে হামিদুরের মাথা ইটের ওয়ালের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগলে তিনি গুরুতর আহত হয়ে পড়েন।

একপর্যায়ে আহত হামিদুরকে থানাহাজতে বন্দি করে রাখা হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। হামিদুরের সঙ্গে থাকা খালাতো ভাই ফারুক হোসেন ও প্রতিবেশী নইমুদ্দিন আহত অবস্থায় তাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতেই তিনি গ্রাম্য ডাক্তারের চিকিৎসা করছিলেন।

২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হামিদুর রক্ত বমি শুরু করলে তাকে প্রথমে পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ডাক্তারের পরামর্শে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১১টায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে স্বজনরা রাতেই অ্যাম্বুলেন্স যোগে লাশ পত্নীতলা থানায় নিয়ে আসেন। বুধবার সকালে লাশের ময়নাতদন্তের পর বিকালে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নিহতের মা আছিয়া বলেন, আমার ছেলেকে ওসি বুকে লাথি মারায় তার মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ছেলে হত্যার বিচার চান তিনি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হামিদুরের খালাতো ভাই ফারুক বলেন, ওসির মারধরে দুইবার হামিদুরের মাথা ইটের দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় তিনি চরমভাবে আহত হন। ওসির মারপিটের ভয়ে হামিদুর স্ত্রীকে নিতে রাজি হলেও তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ওসির মারপিটের কারণেই হামিদুরের মৃত্যু হয়েছে বলেও তিনি জানান।

তিনি আরও জানান, লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে সুষ্ঠু বিচারের জন্য। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।

পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার রাত ৮টায় যখন হামিদুরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তিনি রক্ত বমি করছিলেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

এ বিষয়ে পত্নীতলা থানার ওসি সামসুল আলম শাহ সমঝোতার জন্য হামিদুরকে থানায় ডেকে নিয়ে আসার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তাকে কোনো মারধর করা হয়নি। ঘটনার ৩ দিন পর অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এরপরও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফতাব উদ্দীন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লাশের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। থানা পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক অবস্থায় তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। অন্য কোনো কারণে হামিদুর রহমানের মৃত্যু হতে পারে।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন