বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার পঞ্চবটিতে সংখ্যালঘু ওপর বর্বরচিত হামলা হয়েছে। লাঞ্ছিত হয়েছে ২ তরুণী। বরিশাল ও গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি কর্মীদের তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। তারা সংখ্যালঘুদের দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। রূপকাঠিতে আওয়ামীলীগ কর্মী-সমর্থক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা এখন বিএনপি সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে । নির্বাচনের পর থেকে বাড়ি ঘর ভাংচুর ,হামলা,লুটপাট ও কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে । চলছে চাঁদাবাজি। ইতোমধ্যে রুপকাঠি বাজারের বিশিষ্ট এক সংখ্যালঘু ব্যাবসায়ী আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। কুমিল্লার চান্দিনা, দেবীদ্বার, মুরাদনগর ও বরুড়ার বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত অন্তত ২০/২৫টি বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওইসব এলাকায় সংখ্যালঘুরা প্রাণ ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। যারা আছে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। নারায়নগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ফতুল্লা থানার পঞ্চবটিতে বৃহস্পতিবার সকালে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের হাত থেকে চার মাসের শিশু ও ৮০ বছরের বৃদ্ধাও রেহাই পায়নি। কাপড় খুলে দিগম্বর করে ফেলা হয় বৃদ্ধাকে। বিএনপি সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত নূরা ও ইউনুসের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, ফতুল্লা থানার পঞ্চবটিতে এক একর দেবোত্তর সম্পত্তি ‘শীষ মহল’-এ প্রায় এক শ’ হিন্দু পরিবারের বসবাস। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় স্থানীয় বিএনপি সন্ত্রাসী নূরা ও ইউনুসের নেতৃত্বে ১০/১২ জন শীষমহলে হামলা চালায় এবং সংখ্যালঘু নেতা হরিহরপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষক দিলীপ মণ্ডলকে খুঁজতে থাকে। তারা সংখ্যালঘুদের সামাজিক সংগঠন কৃষ্ণকলি সমাজকল্যান সংসদ দখলের চেষ্টা চালায় এবং লক্ষীরানীদাস (২৮)ও তার ছেলে সজীব দাস কে মারধর করে। হামলার জন্য থানা যুবদল সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় মামলা হয়েছে । পুলিশ হাশেম (৩০) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে । বরিশাল থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, বরিশাল ও গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি কর্মীদের তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। তারা সংখ্যালঘুদের দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। সূত্র জানিয়েছে, নগরীর বাজার রোড, দফতরখানা, হাটখোলা এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েক যুবককে মারধর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে দেবীদ্বারের নাই ঘর, ফাতেহাবাদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে। ̧নাই ঘরে অমর দাস ও বিকাশ দাসের বাড়ি ভাংচুর লুটপাট হয়েছে। পরিবারের লোকজনকে মারধর করা হয়। তারা বর্তমানে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া এ গ্রামে অন্য আরও কয়েকটি বাড়িতে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চান্দিনা উপজেলার মাইসকার, নবাবপুর, মহিচাইর, করতোলা, বারেরা, বগদুটি, দোলাই নবাবপুর, বড়কান্দাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে হামলা, লুটপাট হয়েছে। এসব এলাকায় সংখ্যালঘু লোকজনকে হুমকি ধামকি এবং বাড়ি ছেড়ে যাবার জন্যও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। চান্দিনার আইরকামুড়ার শীল বাড়িতে নেপাল মাস্টারের বাড়িঘর ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাট হয়। এ বাড়ির নারীদের ওপর অত্যাচার করা হয়। চান্দিনায় আতঙ্কিত হিন্দু লোকজন দোকান পাট খোলেনি। বরুড়ার ঝলম, আড্ডা বাজারে সংখ্যালঘুদের দোকান পাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। বুড়িচংয়ের ইদ্রাবতী গ্রামের সংখ্যালঘুদের হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। মুরাদ নগরের বিভিন্ন এলাকায়ও একই রকম ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ায় এবং তাদের পক্ষে কাজ করায় এসব করা হচ্ছে।
দৈনিক জনকন্ঠ, ৫ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন