ইমামকে অব্যাহতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে একটি মসজিদে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত হয়েছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মসজিদের মোতাওয়াল্লিসহ ছয়জন। 

শুক্রবার (২ এপ্রিল) দুপুরে জুমার নামাজের পূর্বে উপজেলার সোনাকান্দা কিল্লা জামে মসজিদের ভেতর এই ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইমামকে কেন্দ্র করে মসজিদে কয়েকদিন যাবত চলমান উত্তেজনার বিষয়টি পুলিশ অবগত ছিল। ইমামকে অব্যাহতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে সেখানে একটি প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও সংঘাত ঠেকাতে ব্যর্থ হন তারা।

পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বন্দর অঞ্চলের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাকান্দা কিল্লা জামে মসজিদে দুই পক্ষের বিবাদ দীর্ঘদিনের।

একটি পক্ষ মসজিদের ইমাম মুফতি সাইফ উল্লাহকে অব্যাহতি দিতে চায় এবং অন্য আরেকটি পক্ষ তাকে মসজিদে রাখতে চায়। এ নিয়ে দুই মাস পূর্ব থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলমান ছিল।

সম্প্রতি মসজিদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দোয়া পড়ানোকে কেন্দ্র করে ইমামের সাথে প্রতিপক্ষের পুনরায় তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে মসজিদের ইমামকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি ওঠে। এ নিয়ে মসজিদের মোতাওয়াল্লি সিরাজ মুন্সি ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. এবায়েদ উল্লাহ পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন।

ইমামের পক্ষ নেন এবায়েদ উল্লাহসহ বন্দর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানুসহ অন্যান্যরা। ইমামকে অব্যাহতি দেওয়াকে কেন্দ্র করেই শুক্রবার জুমার নামাজের বয়ানের সময় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এই মারামারির ঘটনায় আহত হয়েছেন- বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, মসজিদের মোতাওয়াল্লী সিরাজ মুন্সি (৬৫), তার ভাই জালাল মিয়া (৫০), ভাতিজা কাজী ফয়সাল (২৫) ও ফটো সাংবাদিক ইমরুল কায়েস সোহেল (৪০) ও মুসুল্লী আলতাফ (৫০)।

এদিকে ঘটনার পর মসজিদ পরিদর্শন করে বন্দর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা সুলতানা নাসরিন জানান, মসজিদের দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ রয়েছে। ওই বিবাদকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

অন্যদিকে মসজিদের ইমাম মুফতি সাইফ উল্লাহ’র অভিযোগ, মসজিদের মোতাওয়াল্লী সিরাজ মুন্সি ও তার ছেলে জামায়াতে ইসলামের নেতা কাজী মামুন দুই মাস পূর্বে মসজিদের মুয়াজ্জিনের সাথে খারাপ আচরণ করে। প্রায় সময়ই তারা এই ধরনের আচরণ করে।

এছাড়া মসজিদে মিলাদের টাকা-পয়সার হিসেবে গরমিলসহ আরও কিছু ব্যাপারে প্রতিবাদ জানালে ইমামের উপর রুষ্ট হন সিরাজ মুন্সি ও তার ছেলে। ইমামকে মসজিদ থেকে তাড়ানোর পরিকল্পনা করতে থাকে তারা।

ইমাম মুফতি সাইফ উল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার একটা চিঠি দিয়ে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে আমি আর মসজিদে নামাজ পড়াতে আসিনি। কিন্তু মসজিদের সভাপতি এবায়েদউল্লাহ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির নেতা সানাউল্লাহ সানুর ভাই ফকির উল্লাহ রূপালী আবাসিক এলাকায় আমার বাড়িতে আসেন।

তাদের কথায় আমি জুমার নামাজ পড়াতে যাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সিরাজ মুন্সি, তার আপন ভাই জালাল, চাচাতো ভাই জাতীয় পার্টির নেতা আজিজুল, শেখ ফরিদ, ভাতিজা কাজী ফয়সাল মসজিদে এসে হৈ-চৈ শুরু করেন। এ নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাকান্দা এলাকায় সোনাকান্দা কিল্লা জামে মসজিদটি অবস্থিত।

এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হান্নান সরকার বলেন, মসজিদের ইমামকে অব্যাহতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির নেতা আজিজুল এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ভাই ফকির উল্লাহ, ভাতিজা ফয়সালের তর্ক-বিতর্ক হয়। পরে তা মারামারিতে রূপ নেয়। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা এখনও রয়েছে। যেকোনো সময় আবারও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি আশংকার কথা জানান।

মসজিদকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হওয়াতে পূর্বেই মসজিদের বাইরে থানা পুলিশ অবস্থান নেয়। তবে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ঠেকাতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতিতে সংঘাতে জড়াতে দেখা যায় দুই পক্ষকে।

এ বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, মসজিদের দুটি পক্ষের বিবাদ পুরানো বলে জেনেছি। উত্তেজনা ছিল জানি কিন্তু এ নিয়ে মারামারি হয়েছে কিনা জানি না। এ বিষয়ে কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সময় নিউজ টিভি

মন্তব্য করুন