পাবনার বেড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার সামনেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে।

২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার উপজেলার হাঁটুরিয়া-জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বুধবার ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক শামীম আক্তার বাদী হয়ে বেড়া মডেল থানায় মামলা করেছেন।

জানা গেছে, হাঁটুরিয়া-জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পুকুর লিজ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও হাঁটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক শামীম আক্তারের তিক্ততা চলছিল। এরই জেরে নুরুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক শামীমকে পিটিয়ে আহত করায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসহ স্থানীয় প্রশাসনে তোলপাড় চলছে।

আহত প্রধান শিক্ষক শামীম আক্তার জানান, সভাপতি নুরুল ইসলাম বিদ্যালয়ের পুকুর নয় বছর ধরে লিজ দিয়ে টাকা তুলে বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এবারও পুকুরটি বিদ্যালয়ের সদস্য আবদুল আলীমকে লিজ দিয়ে টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে সভাপতি ও সদস্য আলীম ভাগ করে নেন।

প্রধান শিক্ষক শামীম আরো জানান, বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে পুকুর লিজের টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেওয়ার জন্য সভাপতিকে অনুরোধ করলে তিনি শোনেননি। বরং বিষয়টি নিয়ে সভাপতি ও তার সহযোগী আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাইদ বিদ্যালয়ে আসেন। বিষয়টি সভাপতিকে জানিয়ে বিদ্যালয়ে আসার জন্য বলি। কিছুক্ষণ পর সভাপতি তার দুই সহযোগী আবদুল আলীম এবং আলতাফ হোসেনকে নিয়ে আমার কক্ষে আসেন। এ সময় সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট ও মিথ্যা অভিযোগ দেন সভাপতি। এসবের প্রতিবাদ করায় সভাপতি নুরুল ইসলাম আমার ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে আমাকে কিলঘুষি ও অফিসের চেয়ার তুলে মারধর করেন। তার সঙ্গে থাকা দুই সহযোগীও আমাকে মারধর করেন।

এ ঘটনার পর আহত প্রধান শিক্ষক শামীম আক্তার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাইদকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান। পরে তাদের পরামর্শে বেড়া মডেল থানায় সভাপতি ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রধান শিক্ষক।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাইদ বলেন, প্রধান শিক্ষককে আমার সামনে মারধর করেছেন ওই নুরুল ইসলাম ও তার দুই সহযোগী। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও হাঁটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আসলে বড় নয়। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের একটি কপি বেড়া মডেল থানায় এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেড়া মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. শাহিদ মাহমুদ খান বলেন, প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু করেছি। এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সভাপতিসহ অভিযুক্তদের পাওয়া যায়নি। তারা পলাতক।

এদিকে প্রধান শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা।

পরিবর্তন

মন্তব্য করুন