পুরনো ঢাকার শাঁখারি বাজারে গতকাল মঙ্গলবার কামাল মোহাম্মদ হানিফ নামে এক দুর্বৃত্ত লাথি মেরে শনিদেবের মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেছে। স্থানীয় লোকজন কামালকে আটক করেছে। তবে তাকে তারা পুলিশে সোপর্দ করেনি। তাদের দাবি ঘটনাস্থলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অথবা ভারতীয় হাইকমিশনার না এলে তারা কামালকে হস্তান্তর করবে না। এ ঘটনায় পুরনো ঢাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা শাঁখারি বাজার শনিদেব মন্দিরের সামনে জড়ো হয়ে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, বিকেল ৫টায় হানিফ পূজারিবেশে মন্দিরে প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে সে লাথি মেরে শনিদেবের মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে এবং চিৎকার করে বলতে থাকে ‘বাংলাদেশে আল্লাহর আইন চলবে, এখানে কোন মূর্তি থাকবে না’। তাৎক্ষনিকভাবে মন্দিরে থাকা লোকজন কামালকে আটক করে। পরে তাকে পার্শ্ববর্তী একটি চার তলা ভবনে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে কামালের সঙ্গে কথা বললে সে জানায়, তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার আমতলি গ্রামে। সে জগন্নাথ কলেজ থেকে এম.এ ডিগ্রি নিয়েছে। সে জানায়, কেউ তাকে এখানে পাঠায়নি। তবে সে জানায়, সে এক সময় জামাতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়। ঢাকায় সে ৬৪ পাতলাখান লেনে বসবাস করে। ওদিকে ঘটনার পরপরই মৎস্য ও পশুপালনমন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ঘটনার প্রতিবাদ জানায় ও খোকাকে ফিরে যেতে বলে। জনাব খোকা মাইকে তাদের নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হন। তিনি সেখানে ৭/৮ মিনিট থেকে চলে আসেন। তিনি বলেন, আইনের মাধ্যমেই মন্দিরে হামলার বিচার হবে। ঘটনাস্থলে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এ ব্যাপারে মন্দির কমিটির সাধারাণ সম্পাদক দেবদাস রায় বুড্ডা জানান, শনিদেব মন্দিরে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোক পূজা দিতে আসে। গতকাল যে যুবক এসেছে তাকে আমরা আর কখনও দেখিনি। আমরা এখন শঙ্কিত হয়ে উঠেছি। কারণ যুবকটি বলেছে সে কোন মূর্তি রাখবে না। এতে সন্দেহ হচ্ছে তার পেছনে আরও লোক থাকতে পারে। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অনিল নাথ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব ধর পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শাঁখারি বাজারে মন্দিরে ঢুকে মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে ওই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।

সংবাদ, ৯ জানুয়ারি ২০০২

মন্তব্য করুন