বগুড়া শহরতলির সাবগ্রাম ইউনিয়নের নাথপাড়া এলাকায় সর্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গামন্দিরে লক্ষ্মী প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ২১ অক্টোবর বুধবার দিবাগত রাত একটার পর কোনো একসময়ে এ ঘটনা ঘটে। ভোরে পূজা উদ্‌যাপন কমিটির লোকজন মন্দিরে গেলে লক্ষ্মী প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়টি জানাজানি হয়।

 

খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী ও পূজা উদ্‌যাপন কমিটির নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করে প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবং থানা-পুলিশকে মাঠে নামানো হয়েছে। তারা কাজ করছে। এ ঘটনায় জড়িত কেউ ছাড় পাবেন না।

মন্দির কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই দুর্গামন্দিরে গত মঙ্গলবার থেকে লক্ষ্মীপূজা শুরু হয়। বুধবার রাতে ভরা পূর্ণিমা ছিল। পূর্ণিমার পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে লক্ষ্মী প্রতিমা বিসর্জনের কথা ছিল। গতকাল রাত নয়টা পর্যন্ত মন্দিরে লক্ষ্মীপূজার আনুষ্ঠানিকতা ছিল। রাত একটা পর্যন্ত সেখানে মন্দির কমিটি ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ ভক্তরা অবস্থান করেন। রাত একটার পর যে যাঁর মতো বাড়ি চলে যান। সেখানে কোনো পাহারাদার ছিলেন না। সকালে পূজা উদ্‌যাপন কমিটির লোকজন মন্দিরে গিয়ে লক্ষ্মী প্রতিমা ভাঙচুরের দৃশ্য দেখতে পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দেন। পরে পুলিশ ও পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের স্থানীয় নেতারা ঘটনাস্থলে যান।

সাবগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীশ্রী দুর্গামন্দির কমিটির সভাপতি রঞ্জন দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত একটা পর্যন্ত মন্দিরে লোকজন ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মণ্ডপে থাকা শেফালিগাছ থেকে ফুল তুলতে যান আমার বৃদ্ধ মা নীলা রানী দেবনাথসহ প্রবীণ লোকজন। তাঁরা এ সময় লক্ষ্মী দেবীর প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি, ভাঙা লক্ষ্মী প্রতিমা উপুড় হয়ে পড়ে আছে। মাথা ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাশে কয়েক ফোঁটা রক্তও পড়ে ছিল। দুর্বৃত্তরা মন্দির ভাঙতে গিয়ে জখম হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

রঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সারা দেশে সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং মন্দিরে হামলার যে ঘটনা ঘটছে, সেই একই ঘটনার অংশ হিসেবে নতুন করে আমাদের মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের বগুড়া শহর শাখার সভাপতি পরিমল প্রসাদ রাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মন্দিরে গিয়ে দেখি, ভাঙা লক্ষ্মী প্রতিমা উপুড় হয়ে পড়ে আছে। প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে। তাঁদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে এমনটা আশা করছি।’

প্রথম আলো

মন্তব্য করুন