কথায় নয় কাজে পরিচয় দিন। হিন্দুসহ দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত বর্বরোচিত অত্যাচার অবিলম্বে বন্ধ করুন। নিজের মায়ের মতো প্রিয় জন্মভূমি থেকে বের করে দেয়ার পাঁয়তারা থেকে বিরত থাকুন। নির্বাচনে বিশেষ একটি দলকে সমর্থন করার সন্দেহে ইতোমধ্যেই অধিকাংশ জেলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। অথচ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আবহমান বাংলাদেশের গর্বিত ঐতিহ্য সেই ঐতিহ্য ভেঙ্গে হাজার হাজার হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের গৃহচ্যুত করা হয়েছে। সহায়-সম্পত্তি লুট করা হয়েছে। অসংখ্য তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। হিন্দুদের মন্দিরও ভাংচুর করা হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত দুই সপ্তাহে দেশের ৩৫টি জেলার প্রায় তিন ডজন লোক হত্যার শিকার হয়েছে। এদের অধিকাংশই সাম্প্রদায়িকতার শিকার। অনেক স্থানে সংখ্যা গুরু মুসলমানও সংখ্যালঘুদের ঠেকাতে এই বলির শিকার হয়েছেন। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, পিরোজপুর, যশোর, ফরিদপুর, মাদারিপুর, গোপালগঞ্জ থেকে শুরু করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলাসহ দেশের অধিকাংশ জেলা এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা থেকে রেহাইপায়নি। বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থানার হোগলাপাশা ইউনিয়নের কয়েক হাজার অধিবাসী ভয়ে আতঙ্কে ঢাকায় আশ্রয় নিয়েছে। সাতক্ষীরার আশাশুনি তালা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর থানাসহ এলাকার অসংখ্য অধিবাসী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তালা ও নরসিংদীসহ কয়েকটি এলাকায় মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুর করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে মাদারীপুর শহরের কলাতোলা এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা ডা. রণজিৎ সাহা (৫০) ও তাঁর কলেজ পড়ুয়া এক মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এর আগে ঘরের দরজা ভেঙ্গে সহায় সম্পদ লুটপাট করা হয়। সংসদ সদস্যসহ এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা অপহৃতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার মাগুরার শ্রীপুর থানার নহাটা গ্রামের পালপাড়ার তিন তরুণীকে প্রায় একই কায়দায় অপহরণ করা হয়েছে। ফরিদপুরের নগরকান্দা, ভাঙ্গা, বরগুনা, শহরঘাটা, আমতলি, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া, বরিশাল, ভোলাসহ দেশের হিন্দু প্রধান এলাকা এখন আতঙ্কের জনপদ। অনেকে ভয়ে দেশান্তরী পর্যন্ত হয়েছে। নিন্দিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কোন প্রতিকার হয়নি। ফলে অত্যাচারের স্টীমরোলার বেড়েই চলছে। এই অবস্থায় পুলিশী ভূমিকা হতাশাবঞ্জক। কর্তব্যরত পুলিশের ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে অনেক বর্বর ঘটনার নেপথ্যে তাদের অদৃশ্য হাত রয়েছে। ওপর থেকে নির্দেশ গেলে বলা হচ্ছে, খবরের কাগজ গুলো বাড়াবাড়ি করছে এসব নিয়ে। যা ঘটেছে তা অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। অথচ হাজার হাজার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা এখন প্রায় বিরান। রাতে মহিলা ও শিশুকে ঘরে রাখার সাহস পায় না । অনেকে বাড়িঘরে তালা ঝুলিয়ে আত্মরক্ষার্থে দূরে শেল্টার নিয়েছেন। অবশ্য পুলিশের আইজি নুরুল হুদা কথা বলেছেন অন্য সুরে। তিনি জানান, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারসহ হামলা ও লুটতরাজের অভিযোগে ১৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার ওসিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এ সামান্য ব্যবস্থা নেয়াই কি সব? নিতান্তই দায়সারাগোছের কিছু না করে কড়াভাবে ব্যবস্থা নেয়ার এখনই প্রয়োজন । নইলে এ আগুন ছড়িয়ে পড়লে দেশের অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারে। এ অভিমত দেশবাসীর প্রায় সবার। ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ ও প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আহবান জানিয়েছেন।

দৈনিক জনকন্ঠ, ১২ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন