পটুয়াখালীর বাউফল মাদ্রাসার সিঁড়ি থেকে পড়ে আরাফাত হোসেন (৮) নামের এক শিশুশিক্ষার্থী মারা গেছে। পরিবারের অভিযোগ, মাদ্রাসার এক শিক্ষকের নির্যাতনের ভয়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামার চেষ্টা করছিল আরাফাত। পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় সে। ২৪ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
আরাফাত বাউফল উপজেলার মহাশ্রাদ্ধি গ্রামের বাসিন্দা হাসান প্যাদার ছেলে। সে আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের কাশিপুর মারকাজুন-নূর হাফিজিয়া ও নূরানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
আরাফাতের দাদা নুর হোসেন প্যাদা বলেন, ৮–৯ মাস আগে ওই মাদ্রাসায় আরাফাতকে ভর্তি করা হয়। পড়া মুখস্থ না হওয়ায় গত রোববার বিকেলে তাকে মারধর শুরু করেন মাদ্রাসাশিক্ষক জিকিরুল্লাহ (৩৮)। একপর্যায়ে আরাফাত দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নামার সময় পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় সে। তার মাথার হাড় ভেঙে যায় এবং ডান চোখ গুরুতর জখম হয়। বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের তখন জানানো হয়নি। অবস্থা খারাপ দেখে গত সোমবার সকালে আরাফাতকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান শিক্ষক জিকিরুল্লাহ। সেখানে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে আরাফাতের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়।
আরাফাতের বাবা হাসান প্যাদা পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। ওই দিনই তিনি আরাফাতকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে সে মারা যায়। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার রাত ১১টার দিকে আরাফাতের লাশ বাউফলের গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
আরাফাতের বাবা হাসান প্যাদা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তখনই তাঁদের জানাতে পারত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তাহলে আরাফাতকে দ্রুত চিকিৎসা করাতে পারতেন। তাহলে তাকে হয়তো বাঁচানো যেত।
অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মাদ্রাসাশিক্ষক জিকিরুল্লাহর মুঠোফোন নম্বরে কল করলে তিনি ধরেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার ‘রং নম্বর’ বলেই ফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরে তিনি আর ফোন ধরেননি।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মাদ্রাসা থেকে জানানো হয়েছে, আরাফাত সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।