আতঙ্কিত জনপদ বাগেরহাটে মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে আবারও সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৬টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার যাত্রাপুরের উৎকুল গ্রামের সাহাপাড়ায় সংঘটিত ওই ঘটনার পর এলাকায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার শিকার নারী শিশুসহ শতাধিক মানুষ শুক্রবার সকালে জেলা পুলিশ ভবনের সামনে অবস্থান নিলে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে নিয়ে এখানে পুলিশ সুপার আবদুস সালাম (পিপিএম) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এলাকাবাসীর ভাষ্য লিপিবদ্ধ করেন। ২৫/৩০ ঘর সংখ্যালঘু পরিবার অধ্যুষিত এই এলাকায় ৪ সদস্যের পুলিশ দল মোতায়েন করা হয়েছে। আহতরা ওই ঘটনার জন্য এলাকার চিহ্নিত বিএনপি সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছে। তবে বিএনপি ঘটনাটিকে নিজেদের সাজানো বলে দাবি করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, উৎকুল বাজারে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে পাল্টাপাল্টি মিছিল হয়। এসময় ধাওয়াধাওয়ি হয়ে উভয় পক্ষের তিনটি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়। পরে সন্ত্রাসীরা বাজারের জনৈক মোস্তার ও হালিমের দোকানে হামলা চালায়। এরপর রাত ২টার দিকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গৌতম সাহা, স্বপন সাহা, তারাপদ সাহা, গৌরপদ সাহা, সুনীল সাহা ও রবিন সাহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
করে। গভীর রাতে আগুনের শিখা দেখে আতঙ্কিত লোকরা ছোটাছুটি শুরু করে। সবাই মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আনতে ২/৩টি ঘর সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। প্রত্যক্ষদর্শী সাহেবালী জানান, রাত ৮টায় বিএনপির সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে ফিরেযাবার পথে যাত্রাপুর বাজারে ২টি টেম্পোর মধ্যে সংঘর্ষে ৩ জন আহত হয়। বিএনপির অভিযোগআওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় তারা আহত হয়। অপর এক এলাকাবাসী বীরেণ চক্রবর্তী জানান, ওই সময় ঐক্য জোটের নামে সন্ত্রাসীদল মাইকিং করে লাঠিসোটা নিয়ে কর্মীদের জড়ো হবার জন্য আহ্বান জানায়। এলাকার চিহ্নিত নুরু মেম্বারের নেতৃত্বে সাবু, মাহফুজসহ ৩০/৪০ জনের সন্ত্রাসীদল হামলা চালায়। পুলিশ ধারণা করছে নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও দোকানে হামলার জের হিসেবে রাতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ভক্ত (১১) ও বিনয় (৩২) নামে ২ ব্যক্তি আহত হয়। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। তবে ২৩ ব্যক্তির নামে মামলা দায়েরের দাবিতে আওয়ামী লীগ মিছিল ও পথসভা করেছে। শেখ হেলালের ঘটনাস্থল পরিদর্শন খুলনা অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, বাগেরহাট-১ ও বাগেরহাট-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ হেলাল উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, ’৭১-এর কুখ্যাত রাজাকার রজব আলী ফকিরের ছেলে ও ষাটগম্বুজ নেতা তারিকুল ও তার ভাইয়ের নেতৃত্বে বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া) নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালানো হচ্ছে। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ভয়ভীতি প্রদর্শন ও লুটতরাজ চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোন কোন স্থানের ঘটনা ’৭১-এর নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে। শুক্রবার বিকালে যাত্রাপুর ইউনিয়নের উৎকুল গ্রামের সাহাপাড়া এলাকা পরিদর্শনকালে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। উলে−খ্য, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সন্ত্রাসীরা সাহাপাড়া এলাকার পাঁচ বাড়ির ৬টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে। লুট করেছে হাঁস-মুরগি ও ছাগল। শেখ হেলাল তাঁর সঙ্গীসহ এলাকায় গেলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলে তিনি সকলকে সান্ত্বনা দেন। এ সময় শেখ হেলাল উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কুখ্যাত রাজাকার রজব আলীর ছেলে যুবদল নেতা তরিকের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার উৎকুল বাজারে আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর হয়েছে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারদলীয় জোটের লোকদের জড়ো করা হয়। রাতে উৎকুল গ্রামের সাহাপাড়ায় নৃশংসতা চালানো হয়েছে। কার্ত্তিকদিয়া গ্রামের নিজারীপাড়ায় বৃহস্পতিবারও তাণ্ডব সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি বাগেরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের মদদদানের অভিযোগ আনেন এবং অবিলম্বে উক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেন। যদি ওসিকে সরানো না হয় এবং সংখ্যালঘুসহ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ না হয় তাহলে হরতালসহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী দেয়া হবে বলে তিনি ঘোষণা করেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে জরুরীভাবে সেনা মোতায়েন দাবি করেন।
দৈনিক জনকণ্ঠ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০০১