শাহজাদপুর থেকে বিএনপির স্থানীয় সন্ত্রাসীরা উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের দুর্গম পল্লী এলাকা বেলাই গ্রামের সংখ্যালঘু আদিবাসীদের জমির পাকা ধান দিনেদুপুরে কেটে নিয়ে গেছে। দখল করে নিয়েছে আদিবাসীদের মন্দিরের জমি। কালী মন্দিরের জায়গায় সন্ত্রাসীরা বসতবাড়ি বানিয়েছে। এ বছর আদিবাসীরা কালীপূজা করতে পারেনি। মন্দিরে উত্তরের খালি জায়গায় পূজার সব আয়োজন সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে ব্যর্থ হয়ে যায় বলে জানালেন ভারতীবালা মুরালী। জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল আদিবাসীদের একটি খাস জায়গার পাকা ধান স্থানীয় বিএনপি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা কেটে নিয়ে যায়। এ সময় বাধা দিতে গিয়ে মারাত্মক আহত হয় আদিবাসী শিশু-নারী ও পুরুষ। অর্থাভাবে তাদের চিকিৎসা হচ্ছে না। এ গ্রামের আদিবাসীদের নেতা মোহন মুরালী, বাদী হয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায়মামলা করেছে। উল্লাপাড়া থানা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিঃমিঃ দূরের দুর্গম এ পল্লী উধুনিয়া ইউনিয়নের বেলাই গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে এ গ্রামের আদিবাসীদের ওপর বিএনপি সন্ত্রাসীদের নানা নির্যাতনের কাহিনী। ধান কাটা ঘটনায় হামলায় আহত তারাপদ মুরালী বেহুলা বালা, সনাতন মুরালী ও নরেশ মুরালী জানালেন, ধান কাটার দিন বিএনপি সন্ত্রাসীরা লাঠি, ফালা, দা, কুড়াল, শাবল নিয়ে আমাদের ওপর চড়াও হয় এবং বেধড়ক মারপিট করে ক্ষেতের সমস্ত ধান কেটে নিয়ে যায়। আহতরা সবাই বিনা চিকিৎসায় তাদের জীর্ণ ঘরে পড়ে আছে। চিকিৎসার টাকা নেই। আবার এলাকাটি এতই দুর্গম যে চারপাশে তেমন ডাক্তারও নেই। কালু মিয়া, জাকির, হামিদ, গাজিউর, রফিকুল, আজিজ ও রমজান আলী-এরা সবাই মোহন মুরালীর দায়ের করা মামলার আসামী। এরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভয়ভীতি এবং আলফ্রেড সরেনের মতো মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এ গ্রামের আদিবাসীরা পুলিশের ভূমিকা পক্ষপাতমূলক ও রহস্যজনক বলে অভিযোগ করে বলেন, মামলা দায়েরের পর পুলিশ একবার কেবল ঘটনাস্থলে এসেছিল। একজন আসামীকেও পুলিশ ধরতে পারেনি। আদিবাসী নেতা রতন চন্দ্র মুরালী বলেন সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার কারণে বিএনপি সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর এ জুলুম নির্যাতন করছে। বলরাম মুরালী, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুরালী, ভারতীবালা, আলোবালা জানায়, এ গ্রামের আদিবাসীরা বিএনপি সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এদের নির্যাতনে আদিবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ গ্রামের আদিবাসী যুবতী-নারীরা তাদের সম্ভ্রম নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মান-ইজ্জত ও সম্পদ এখানে নিরাপত্তাহীন। আদিবাসীদের জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে গেছে। এর আগে মন্দির উচ্ছেদ করে জায়গা দখল করে নেয়ায় আদিবাসীরা এ বছর কালীপূজা করতে পারেনি। আদিবাসীদের নেতা মোহন মুরালীর দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লাপাড়া থানার দারোগা জানালেন, বেলাই গ্রামের সংখ্যালঘু আদিবাসীদের জানমালের নিরাপত্তায় সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। তিনি গ্রামবাসীদের আইন হাতে তুলে না নেবার অনুরোধ করে এসেছেন। হতদরিদ্র আদিবাসীরা প্রত্যেকেই ভূমিহীন। এরা সবাই কৃষি শ্রমিক। অপরের জমিতে দিনমজুরি খেটে এদের দিন যায় কোন রকমে।
দৈনিক জনকণ্ঠ, ১৯ মে ২০০২