মহেশখালী দ্বীপের কালারমার ছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী এলাকায় এক চাকরিজীবী তরুণীকে অপহরণের পর ১৪ বখাটে তাঁকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এই বর্বর ঘটনা গত ৭ জুলাই ঘটলেও গত পাঁচ দিন ধর্ষিতাকে অবরুদ্ধ করে রেখে ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায় প্রভাবশালী ধর্ষকের দল ও স্থানীয় কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। ১২ জুলাই শুক্রবার খবর পেয়ে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করেছে।

ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী চট্টগ্রাম শহরে একটি বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁর মা থাকেন মাতারবাড়ীতে। মাকে দেখার জন্য তিনি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৭ জুলাই সন্ধ্যায় মহেশখালী দ্বীপে এসে কালারমার ছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী এলাকায় দুর্বৃত্তের কবলে পড়েন।

কালারমার ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার লিয়াকত আলী  বলেন, ওই গ্রামের ১১ যুবক এবং মাতারবাড়ী এলাকার তিন যুবক ওই তরুণীকে জবরদস্তি চালিয়াতলী পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে পাহাড়ের একটি ঘরের বাসিন্দাদের বের করে দিয়ে এই ১৪ দুর্বৃত্ত বখাটে সারা রাত ধরে পালাক্রমে তাঁকে ধর্ষণ করে।

পরদিন সকালে স্থানীয় নারী ইউপি মেম্বার খতিজা বেগম ঘটনা জানতে পেরে ধর্ষিতাকে মাতারবাড়ীতে অন্য নারী মেম্বার শামীমার বাড়িতে পৌঁছে দেন। সেখানে ওই তরুণীকে চিকিত্সা দেওয়া হয়। এই ফাঁকে ধর্ষকের দলটি ইউপি মেম্বারদের ঘিরে ঘটনা পুলিশকে না জানানোর জন্য চাপ দেয়। সেই সঙ্গে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে ধর্ষিতাকে ইউপি মেম্বারের ঘর থেকে বাইরে যেতে বাধা দেয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ধর্ষকদের হুমকি-ধমকির মুখে চুপচাপ থাকতে বাধ্য হন।

অবশেষে ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে গতকাল বিকেলে মহেশখালী থানার একদল পুলিশ মাতারবাড়ী গিয়ে নারী মেম্বার শামীমা বেগমের ঘর থেকে গণধর্ষণের শিকার তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। একই সঙ্গে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় মেম্বার শামীমা বেগমকেও।

মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, ইউপি মেম্বার লিয়াকত আলী তাঁর স্থানীয় অফিসে গত বুধবার ধর্ষকদের নিয়ে ঘটনাটি মীমাংসার জন্য বৈঠক করেন। মেম্বার ধর্ষক ১৪ জনের কাছ থেকে টাকাও নেন ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় জড়িত তিন ইউপি মেম্বারের মধ্যে শামীমা বেগম হচ্ছেন ধর্ষিতার আশ্রয়দাতা। তিনি ধর্ষিতাকে সঙ্গে নিয়ে গত রাতে থানায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

ওসি জানান, লিয়াকত আলী মেম্বার ধর্ষকদের নাম-পরিচয় পুলিশকে জানাতে চাননি। তিনি পালিয়ে গেছেন। অন্য নারী মেম্বার খতিজা বেগমও ধর্ষকদের রক্ষার জন্য ঘটনা ধামাচাপা দিতে কাজ করেছেন। এমনকি এই দুই মেম্বার তরুণীকে থানায় না যাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালান। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার তত্পরতায় দুই ইউপি মেম্বার লিয়াকত আলী ও খতিজা বেগম পুরোপুরি জড়িত থাকার বিষয় নিশ্চিত করলেও তাঁদের আসামি করা হবে কি না ওসি তা জানাননি।

ওসি প্রভাষ চন্দ্র আরো জানান, ধর্ষিতা ঘটনার সময় একে অন্যকে ডাকাডাকির মধ্যে তিনজনের নাম জানতে পেরেছেন। তারা হলো ওসমান, আদালত খাঁ ও কামাল। তবে পুলিশ ধর্ষকদের মধ্যে চারজনের পরিচয় জানতে পেরেছে। তারা হলো মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী গ্রামের মৃত আবুল হাছির ছেলে আমির সালাম, মোসতাক আহমদের ছেলে এনিয়া, স্থানীয় নলবিলা দরগাহপাড়ার মোকতার আহমদের ছেলে আদালত খাঁ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ওসমান গনি। ঘটনায় জড়িত অন্যদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

কালের কণ্ঠ

মন্তব্য করুন