সামাজিক দলাদলিতে অংশ না নেওয়ায় মাগুরায় সদর উপজেলার দক্ষিণ শিমুলিয়া গ্রামে স্থানীয় সমাজপতিরা পরিমল রায় নামে এক কৃষক পরিবারকে গত ৬ মাস ধরে ‘একঘরে’ করে রেখেছেন।

 

এতে ওই কৃষক পরিবারটি ঘরের বাইরে রাস্তায়, বাজার-ঘাটে, এমনকি নিজের কৃষিজমিতে চাষাবাদ করতেও যেতে পারছে না।

এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি পরিমল।

উপরন্তু অভিযোগ দেওয়ার কারণে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার ওই পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর একাকি বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন পরিমলের বয়স্ক স্ত্রী অনিতা রায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শিমুলিয়া গ্রামটিতে প্রায় ২ শতাধিক হিন্দু এবং ৩০টি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। সবাই নম:শূদ্র গোত্রের হলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে নানা দলে উপদলে বিভক্ত।

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ওই সম্প্রদায়ের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অমরেশ রায় মারা গেলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ছোটভাই পরিমল রায় ভাইয়ের শেষকৃত্য করতে গ্রামের সব শ্রেণির মানুষকে আমন্ত্রণ জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তার গোত্রের লোকজন।

গ্রামের বর্ধিষ্ণু সমাজপতিরা ওই লাশ দাহ করতে গেলে পরিমলের গোত্রের অন্যান্য লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। এ অবস্থায় নিরুপায় পরিমল রায় শেষ পর্যন্ত নিজের পরিবারভুক্ত লোকদের নিয়ে ভাইয়ের শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। ওই ঘটনার পর থেকেই নিজ গোত্রীয়দের পাশাপাশি গ্রাম্য সমাজপতিরাও পরিমলের পরিবারের ওপর রুষ্ট ছিল।

এদিকে মাসছয়েক আগে গ্রামের সব হিন্দু পরিবার নতুন করে সামাজিক দল গঠন করে। কিন্তু পরিমল রায় সাম্প্রদায়িক দলভুক্ত হতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের আক্রোশের শিকার হন তিনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামের তথাকথিত সমাজপতিরা তাকে ‘একঘরে’ ঘোষণা দিয়ে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পরিমল রায়ের পরিবারের।

পরিবারপ্রধান পরিমল রায় জানান, বড় ভাইয়ের মৃত্যুর সময় সবাইকে একত্র করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমার গোত্রীয়রা সেটি মেনে নেয়নি। তারা আমার ভাইয়ের দাহ পর্যন্ত করেনি। অথচ তারাই এখন সবাই এক হয়ে আমার ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আমার সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দেয় না। আমার জামাতা বেড়াতে গেলে তাকে একাধিকবার অপদস্থ করেছে। আমার একমাত্র ছেলে প্রাণভয়ে বাড়িতে থাকতে পারে না। শহরে বাসা ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে।

তবে পরিমল রায়ের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গ্রাম্য মাতবর স্কুল শিক্ষক নিশিকান্ত বিশ্বাস। তিনি বলেন, গ্রামের হিন্দু পরিবারের সবাই এখন একটি সমাজে বাস করছে। কিন্তু পরিমল রায় একাকি চলছে। তবে তার ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ সঠিক নয়।

এ বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান বলেন, কাউকে একঘরে করে দেওয়ার বিষয়ে কারও কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুগান্তর

মন্তব্য করুন