চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সর্বত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্বাচনোত্তর বিএনপি ক্যাডারদের হামলা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ পুলিশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হামলাকারীদের পক্ষাবলম্বন করছে। বাড়িঘরে হামলা, মারধর, প্রতিমা ভাংচুর, লুটপাট, চাঁদা দাবি, মহিলাদের লাঞ্ছিত করার মতো ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটছে। সংখ্যালঘুদের অনেকে ইতিমধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাৎসরিক বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত । কোন কোন এলাকায় দুর্গাপূজা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। সূত্রে জানা গেছে, মায়ানী, ওয়াহেদপুর, চরশরত, দুর্গাপুর, সদরমাদিঘী, মোবারকঘোনা, হিঙ্গুলি, করেরহাট, ওলিনগর, নাহেরপুর, জোরারগঞ্জ, কাটাছড়া, মোটবাড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপির চিহ্নিত ক্যাডাররা হামলা-নির্যাতন করছে। বড়তাকিয়া বাজারের সংখ্যালঘু তিন ব্যবসায়ীর কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। মোবারকঘোনা গ্রামের রতন শর্মা সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে না পারায় বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গত ৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচপুর গ্রামে বিএনপির সন্ত্রাসী হামলায় শিবু প্রসাদ দে মারাত্মক আহত হন। তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একই সময় নির্মল সিংহ-এর বাড়িতে লুটতরাজ ও নারীদের হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ৭ অক্টোবর কাটাছড়া ইউনিয়নের তেতৈয়া গ্রামে বিএনপির ক্যাডার রফিকের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আশুতোষ নাথের বাড়িতে হামলা চালায় এবং খড়ের স্তুপে আগুন ধরিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। হিন্দু অধ্যুষিত এ গ্রামের পরিবার গুলো চাপের মুখে রয়েছে বলে জানা যায়। হারাধন মাষ্টার, শিবু নাথ, অর্চনা দেবি, জহুরনাথ অভিযোগ করেন বিএনপির স্থানীয় ক্যাডাররা নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি প্রদর্শন করছে। ৫ অক্টোবর রাত ১টায় দক্ষিণ নাহেরপুর গ্রামের কৃষ্ণ ভুঁইয়ার বাড়িতে কালী ও বিষ্ণু মণ্ডপ পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় সঞ্জু দাশ নামে একজন ছাত্রকে সন্ত্রাসীরা মারধর করে। এ ঘটনায় বিএনপি ক্যাডার মতিউর ও ফারুককে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ এলাকার বর্তমান মেম্বার মনোরঞ্জন দাশ জানান, প্রায় ১শটি হিন্দু পরিবার নিয়ে গঠিত দক্ষিণ নাহেরপুরের জনগণকে নির্বাচনের আগের দিন বিএনপি ক্যাডাররা ভোট না দিতে হুমকি দেয়। তাদের বলা হয়, ভোট দিলে এলাকা ছাড়া করা হবে। ক্যাডারদের বাধা অতিক্রম করে প্রায় ১ হাজার ২শ’ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ অপরাধে সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপর নির্যাতন করছে। এমনকি স্কুল-কলেজগামী হিন্দু ছাত্রীদের সম্ভ্রমহানির হুমকি দিচ্ছে। এখানকার বাসিন্দা বিজয় কুমার দাশ, স্বপন ভৌমিক, ডা. তেজেন্দ্র ভৌমিক অভিযোগ করে জানালেন, গ্রামের ৩৫টি পরিবারকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে সন্ত্রাসীরা। বর্তমানে দক্ষিণ নাহেরপুর গ্রামের লোকজন ভীতসন্ত্রত্র হয়ে দিন কাটাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আসন্ন শারদীয় দুর্গা উৎসব পালন নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় শঙ্কিত অবস্থার মধ্যে আছেন।
সংবাদ, ১৫ অক্টোবর ২০০১