কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় সালিশ বৈঠক বসে ৮০ হাজার টাকায় এক নারীর ধর্ষণের অভিযোগ রফা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শনিবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

 

 

ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত শাহিন (২৫) মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইউসুফনগর গ্রামের নূরু মিয়ার ছেলে এবং ভুক্তভোগী (১৯) কুমিল্লা নগরীর ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা। তারা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন।

এদিকে ধর্ষণের অভিযোগ থানায় বসে মিটমাটের বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে স্থানীয় এলাকায় বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়। রবিবার বিকালে বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র, ভুক্তভোগীর স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মুরাদনগর থানায় ভুক্তভোগীর স্বাক্ষরে দাখিলকৃত অভিযোগ ও বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শাহিন বাহরাইন প্রবাসী থাকাকালেই মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগীর (ফুফাতো বোন) সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। চলতি বছরের ১৭ আগস্ট শাহিন দেশে ফেরার পর ওই নারীকে এক মাসের মধ্যে বিয়ে করার প্রলোভনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গিয়ে একসঙ্গে তারা রাতযাপন করেন এবং তাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। পরে শাহিন গোপনীয়তা বজায় রেখে গত ২৮ সেপ্টেম্বর অন্যত্র বিয়ে করেন। এ খবর জানার পর ওই নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করলে পরিবার ও স্বজনদের সহযোগিতায় তার জীবন রক্ষা হয়। পরে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী শনিবার (২ অক্টোবর) সকালে শাহিন ও তার বাবা-মাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মুরাদনগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

এদিন দুপুরে পুলিশ অভিযুক্ত শাহিনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু তাকে আটকের ৫ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও পুলিশ থানায় মামলা রেকর্ড না করে এবং শাহিনকে গ্রেফতার না দেখিয়ে এ ঘটনায় থানায় সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তে ভুক্তভোগীকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত শাহিনের পরিবারের কাছে থেকে ওই টাকা আদায় করে অভিযোগের রফা করা হয়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হলে তিনি ৮০ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে সংযোগ কেটে দেন।

মুরাদনগর থানার ওসি সাদেকুর রহমান সালিশের বিষয়টি স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার অনুমতি নিয়েই এএসআই নূর-আজম এই সালিশটি করেছে। আমার জানামতে ভুক্তভোগীকে বিবাহ দেওয়ার জন্য ওই ছেলের পরিবারের কাছ থেকে এই টাকা নেওয়া হয়েছে।’

কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও সাবেক এপিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহমেদ ফয়সালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগ থানায় কেন, অন্য কোথাও বসেও আপস-মীমাংসা করা যাবে না। কেননা এমন অভিযোগে কেউ দোষী সাব্যস্থ হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।’

অভিযুক্ত শাহিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বোন শাহিনা আক্তার (অভিযোগের ৪ নম্বর বিবাদী) সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযোগকারীকে (ভুক্তভোগী) যেকোন কারণে আমার ভাই বিয়ে করে নাই। তাই সে থানায় অভিযোগ করেছে। শনিবার দুপুরে পুলিশ আমার ভাইকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। সেখানে বৈঠকে অভিযোগের সুরাহা হয়েছে।’

 

সালিশে উপস্থিত ইউসুফনগর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ মাস্টার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি থানার সালিশে উপস্থিত ছিলাম, তবে বিচার আমি করিনি। দুই পক্ষের উপস্থিতিতে থানায় বসে সালিশ শেষে এক ঘণ্টার মধ্যে ভুক্তভোগীকে ৮০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকী আর কিছু জানি না।’

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই নূর-আজম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই যুবতীর অভিযোগের ভিত্তিতে শাহিনকে থানায় নিয়ে আসি। দুইপক্ষের অনুমতিক্রমেই ওসি স্যারের নির্দেশে সালিশ বৈঠক করা হয়। আর সালিশে ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।’

ইত্তেফাক

মন্তব্য করুন