মোল্লাহাট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২৬টি গ্রামের সংখ্যালঘুরা সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বেরুতে সাহস পাচ্ছে না। সন্ধ্যার পরেই ঐ এলাকায় সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘুদের মালিকানাধীন মাছের ঘের থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, কলা গাছ থেকে কলা, নারিকেল গাছ থেকে নারিকেল নিয়ে যাচ্ছে। যেসব গ্রামে এসব ঘটনা বেশি ঘটেছে সেগুলো হলো কোদালিয়া ইউনিয়নের কোদালিয়া, আমবাড়ি, দত্তডাঙ্গা, বাসাবাড়ী, জয়ঢেকী, মনিজিলা, খরমপুর, আড়–য়াঢেকী, গাংনি ইউনিয়নের গাংনি, নগরকান্দি, রাজনগর, বুড়িগাংনি, মাতারচর, গাওলা ইউনিয়নের গাওলা, মেজেরা গাওলা, বড়গাওলা, নাসুয়াখালী, চাঁদেরহাট, কুলাউড়া, মাদারতলী এবং কুলিয়া ইউনিয়নের কুলিয়া, রাজপাট, চরকুলিয়া, ঘাটবিল, টাকিয়ারকুল, বড়কুলিয়া প্রভৃতি গ্রাম। এসব গ্রামেই সংখ্যালঘুদের বসবাস বেশি। নির্বাচনোত্তর সহিংসতা শুরু হলে সন্ত্রাসী হামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের শিকার হয়ে অসংখ্য সংখ্যালঘু নর-নারী প্রাণভয়ে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আবার বাড়িতে ফিরে নতুন ধরনের সন্ত্রাসের শিকারও হয়েছে অনেকে। কুলিয়া গ্রামের রায়মোহন রায়ের ছেলে বরেন রায় (২৫) নির্বাচনের পর প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। দীর্ঘদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকার পর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সে বৃহষ্পতিবার বাড়িতে ফিরে আসে। কিন্তু বাড়িতে আসতে না আসতেই তাঁর ওপর সন্ত্রাসীরা চড়াও হয়। শুক্রবার সকালে এক সন্ত্রাসী বরেনকে রাস্তার ওপর ফেলে বেদম মারপিট করে। তিনি এখন জীবনাপন্ন অবস্থায় মোল্লাহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও থানায় মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে বরেন রায় কেন নৌকায় ভোট দিয়েছে এ অপরাধে জনৈক কামরুল মিয়া তাঁকে শাসায়। এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটির পর কামরুল তাকে বেদম মারপিট করে। তারা উভয়েই প্রতিবেশী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ এলাকার কয়েক অধিবাসী জানায়, ঐ সব গ্রামের সংখ্যালঘু মেয়েরা কোনক্রমেই সন্ধার পর ঘর থেকে বের হয় না। আবার অনেক মেয়ে নিজ বাড়িতে রাত যাপন করছে না। যেখানে একটু বেশি নিরাপদ মনে করছে সেখানেই রাত্রি যাপন করছে। তাঁরা আরও জানান, সন্ধ্যার পর অনেক এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে।
দৈনিক জনকণ্ঠ, ২০ অক্টোবর ২০০১