মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন নেত…বৃন্দ ৮ম সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা বলেছেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশব্যাপি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নির্যাতন ও ভয়ভীতির ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম যে, অবিলম্বে প্রশাসন যদি সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে সারা দেশের আশি লাখেরও অধিক ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া হবে না। নির্বাচনের পূর্বে আরও বহু সামাজিক মানবাধিকার সংগঠন একই আশঙ্কা ব্যাক্ত করেছে। তাঁরা বলেন,নির্বাচনের সময় যেহেতু সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় সাধারণভাবে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক কোন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান না, সেজন্য অতীতেও তাঁদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা হয়েছে। ’৯৬-র নির্বাচনেও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৭ লাখ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি⎯এবার যা দর্শন হয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সম্মিলনের সভাপতি কবীর চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হেনা দাস, সি আর দত্ত, কবি শামসুর রাহমান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর এবং সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষে রাজিয়া মতিন চৌধুরী, হাশেম খান, শ্যামলি, নাসরিন চৌধুরী, খুশী কবির, শামসুল আরেফিন, মুনতাসীর মামুন, শামীম আখতার, কাজল দেবতাথ, ডালিয়া নওশীন, কাজী মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার কবির। তাঁরা বিবৃতিতে বলেন, আমরা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি সারা দেশে বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে তুলানামূলকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটার বেশি, সেখানে হুমকি, হামলা,নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে কমপক্ষে সত্তর লাখ হিন্দু ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। যাঁরা হুমকি উপেক্ষা করে নির্বাচনের দিন ভোট দিতে গিয়েছিলেন তাঁরা নতুন হুমকির শিকার হয়েছেন এবং অনেকেই গ্রাম ত্যাগ করে শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে না গিয়ে শুধু রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে অবিরত নির্বাচনী এলাকায় ঘুরেছেন, যেখানে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। প্রশাসনের নীল নক্সা অনুযায়ী এসব এলাকায় কোন বিশৃঙ্খলা ঘটতে দেয়া হয়নি। যার ফলে প্রচার মাধ্যম ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শণের ঘটনা অধিকাংশ ঘটেছে প্রত ̈ন্ত অঞ্চলে, যেখানে যেতে হয় হেঁটে বা নৌকায়। আমরা বলতে চাই, এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, যেভাবে তাদের ভোটদানে বিরত রাখা হয়েছে তা শুধু নজিরবিহীন নয়, গণতান্ত্রিক চেতনা ও মানবাধিকারের প্রতি চরম অবমাননা, যা কোন সভা সমাজের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। সারা দেশের সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর সুপরিকল্পিত ও উদ্দ্যেশ্যে প্রণোদিত হামলার জন্য বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং খালেদা জিয়ার মৌলবাদী ও তালেবানপন্থী চারদলীয় জোটকে দায়ী করেছে এবং ১ অক্টোবরের নীলনক্সার নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি। এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ অপর এক বিবৃতিতে বলেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিগত প্রায় একমাস সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের শিকার। নানাবিধ কায়দায় তাঁদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালানো হয়। যাতে করে ভোট প্রদান করতে না পারে। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, প্রশাসন এ ব্যাপারে উদ্দ্যেগ নেয়নি।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ৪ অক্টোবর ২০০১

মন্তব্য করুন