অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যত নিকটবর্তী হচ্ছে, দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা ততই বেড়ে চলেছে। আইন রক্ষাকারী সংস্থা নির্বিকার। এমনকি যাদের কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হামলা ও নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন, তারাও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কোনই ভূমিকা রাখছেন না। গত সপ্তাহ এর প্রতিবাদে কোন রাজনৈতিক দলও কোন কর্মসূচি নেয়নি। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে মাত্র। গত সপ্তাহখানেকের মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন এবং কমপক্ষে সাত ব্যক্তি নিহত ও সাত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাতে তারা ভোট দিতে যেতে না পারেন, সে কারণেই বর্তমান মুহূর্তেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর রাজনৈতিক সন্ত্রাসীরা হামলা ও নির্যাতন চালাচ্ছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররা তাদের ভোট দেন না। তাদের ভোট সিংহভাগই যায়
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের পক্ষে। কিছু ভোট মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া প্রগতিশীল, বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তির প্রার্থীরা পান। আওয়ামী লীগের ভোট কমানোর অসদুদ্দেশ্য নিয়েই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের নির্বাচন কেন্দ্রে যাওয়া বন্ধ করার জন্য সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি অত্যাচার নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে।
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে নানারকম নির্যাতনের পথ ধরেছে। তারা বিরাট অংকের চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের কাছ থেকে। দুর্বৃত্তরা চাঁদা আদায় করতে গিয়ে বাবা-মার সামনে মেয়ের, স্বামীর সামনে স্ত্রীর, কোথাও কোথাও এক সঙ্গে মা ও মেয়ের সম্ভ্রম লুটে নিচ্ছে। পুড়িয়ে দিচ্ছে বাড়িঘর। প্রাণভয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নাগরিকরা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, সম্ভব হলে যুবতী বধূ ও কন্যাদের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিয়ে আপাতত অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু নাগরিকদের ওপর হামলার জন্য বিএনপি ও জামাতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটকে দায়ী করছে আওয়ামী লীগ। পক্ষান্তরে বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ ওই সব অঘটন ঘটিয়ে দোষ চাপাচ্ছে চারদলীয় জোটের ওপর।
সংবাদ-এর সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য থেকে জানা যায়, গত কয়েকদিনেররাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের হামলায় কুষ্টিয়ায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু নাগরিকদের এক ব্যক্তি নিহত ও দুই ব্যক্তি আহত, ফেনীতে এক ব্যক্তি নিহত, বাগেরহাটে পাঁচ ব্যক্তি আহত, কুমিল্লার কচুয়ায় তিন ব্যক্তি নিহত এবং দেবিদ্বারে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ধর্ষণের যে সব ঘটনা ঘটেছে তা কেউই প্রকাশ করতে চাচ্ছে না।
সংবাদ, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০১