আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব আইরিন জুবাইদা খান বলেছেন, সরকারকে অবশ্যই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা প্রসঙ্গে আইরিন খান বলেন, তিনি বলেছেন নির্বাচনে মানুষ ভোট দিয়েছে পরিবর্তনের জন্য। এখন সরকারকে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সকালে পুরানা পল্টন লেনে তার পৈত্রিক বাসভবনে এই সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। এ সময় তিনি দেশের মানবাধিকার সমস্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির গ্রেফতারের ঘটনা, রাজনৈতিক সহিংসতা, নারী নির্যাতন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ১১ সেপ্টেম্বরের পর বদলে যাওয়া বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। আন্তর্জাতিক কোনো মানবাধিকার সংগঠনে আইরিন খানই প্রথম বাংলাদেশী যিনি এতটা শীর্ষে উঠেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাধারণ নির্বাচনের পর দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আইরিন খান এই প্রতিবেদনের কপি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারকে দিয়েছেন বলে জানান। সাংবাদিক ও লেখক শাহরিয়ার কবিরের মুক্তি কামনা করে অ্যামনেস্টি মহাসচিব বলেন, বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলেছেন। শাহরিয়ার কবিরকে তিনি ‘বিবেকবন্দি’ আখ্যায়িত করে বলেন, এ মামলার প্রতিটি স্তরে অ্যামনেস্টি পর্যবেক্ষণ করবে। বাংলাদেশে নারীর ওপর শারীরিক নির্যাতন রুখে দাঁড়ানোর কাজকে এই মুহূর্তে তিনি প্রধান কাজ মনে করেন। বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে হতাশা ব্যক্ত করে আইরিন খান বলেন, প্রতিটি সরকার সহিংসতাকে তাদের একটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। অবস্থা এমন যে, এর কোন প্রতিকার নেই। মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তিনি সকলকে সত্যের মুখোমুখি হওয়ার কথা বলেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়ে আইরিন খান বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, মানবাধিকার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাহী বিভাগ থেকে এদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করলে অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি মনে করেন।

প্রথম আলো, ৩ জানুয়ারি ২০০২

মন্তব্য করুন