কোনো ধরনের বড় সহিংস ঘটনা ছাড়াই গত সোমবার ভোলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও আতঙ্ক কাটেনি ভোলাবাসীর। গতকাল মঙ্গলবার ভোটের পরদিন জেলা সদরের রাস্তাঘাট ছিলো ফাঁকা। রাস্তাঘাটে গাড়ি-ঘোড়া ও মানুষের উপস্থিতি ছিলো একেবারেই কম। অধিকাংশ দোকানপাট ছিলো বন্ধ। শহরজুড়ে বিরাজ করছিলো এক থমথমে পরিবেশ। এর মধ্যে মাঝেমাঝে রাজপথ সচকিত করে ছুটে গেছে বিজয়ের রঙ মাখানো বিএনপি সমর্থকদের মাইক্রোবাস আনন্দ মিছিল। তবে গতকাল বিক্ষিপ্তভাবে শহরে বোমা ও গুলির শব্দ শোনা গেছে। সেটা বিজয়ীদের না পরাজিতদের বুঝতে না পেরে শঙ্কায় ছিলো সাধারণ জনগণ। ভোলার রাজনীতির সাধারণ সমীকরণ পাল্টে দিয়ে আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমেদ জেলার তিনটি আসনেই (ভোলা-১, ২, ৩) পরাজিত হওয়ায় জেলার রাজনৈতিক পরিনতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেই অনিশ্চয়তায় ভুগছে মানুষ। গত পাঁচ বছর কোনঠাসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাদের হৃত প্রভাব ফিরিয়ে আনতে কোন পথে এগোবে, সেটাও সাধারণ মানুষের শঙ্কার আরেকটি কারণ। বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর কিছু কিছু স্থানে বিএনপি কর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বোরহান উদ্দিন উপজেলার পক্ষিয়ায় রায় মোহন ডাক্তারের বাড়িতে গত সোমবার মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর আক্রমন চালায়। এখন পর্যন্ত ওই এলাকার বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবার বাড়ি ফিরতে সাহস পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার সম্প্রদায়ের একজন নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, গত সোমবার সন্ত্রাসীদের হামলার পর থেকেই তারা বাড়িছাড়া। সেদিন সকালে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জনপ্রতি নেয়ার সময় তাদের ওপর হামলা হয়। এতে যাদব দাস, গৌরাঙ্গ ঝালুইকর এবং দক্ষিণা মৃধাসহ ছয়জন মরাত্মক আহত হন। সন্ত্রাসীরা তাদের রামদা ও ডাগার দিয়ে কুপিয়ে সেখানে ২৪টি ঘরে লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ সময় তারা দুটি মন্দিরও ভাঙচুর করেছে বলে জানান। তোফায়েল আহমেদ তার আসনে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার’ ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তবে ̄স্থানীয় প্রশাসনের কারণে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে মাদ্রাসার শিক্ষকদের পোলিং এজেন্ট ও প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘু ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বাধা দেয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণ বা বর্জন কোনটাই করবেন না বলে জানান। তোফায়েল আহমেদ গতকাল বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে ভোলা ত্যাগ করেছেন। নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদের পরাজয়ের বিষয়টি ছিলো গতকাল ভোলা শহরের প্রধান আলোচনার বিষয়। লোকজনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য পাওয়া গেছে। সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা ও তোফায়েল আহমেদ দেশের জাতীয় রাজনীতিতে অনেক উপরে চলে যাওয়ায় সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে তার কিছুটা দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। মন্ত্রী থাকাকালে তিনি দলের কর্মীদের চেয়ে নিজের আত্মীয়স্বজনদের বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণেই তিনি নির্বাচনে দলের অনেক কর্মীর সহযোগিতা পাননি। এদিকে চারদলীয় জোটভুক্ত জাতীয় পার্টির (না-ফি) সভাপতি নাজিউর রহমান মঞ্জুর আজ বুধবার ভোলায় আসছেন। ভোলা শহরের নতুনবাজার চত্বরে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ভোলা-১ মোশাররফ হোসেন শাহজাহান, ভোলা-২ হাফিজ ইব্রাহিম, ভোলা-৩ মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং ভোলা-৪ নাজিমউদ্দিন আলমকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। নাজিউর রহমান মঞ্জুর এ সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

প্রথম আলো, ৩ অক্টোবর ২০০১
কৃতজ্ঞতা: শ্বেতপত্র-বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১৫০০ দিন

মন্তব্য করুন