দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন সংখ্যালঘু গ্রামে বিএনপি ক্যাডারদের হামলা, লুটপাটের নেপথ্যে রয়েছে তাদের সম্পত্তি দখল এবং নির্যাতনের মাধ্যমে দেশত্যাগে বাধ্য করা। এভাবে বিএনপি চাচ্ছে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক নষ্ট করতে। সে কারনেই একের পর এক সংখ্যালঘু গ্রামে হামলা হলেও দলীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিএনপি। একই কারনে প্রশাসনও কোন পদক্ষেপ না নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
নির্বাচনের আগে থেকেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন সংখ্যালঘু গ্রামে মানুষদের ভয়ভীতি দেখানো শুরু হয়। যা বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে। তখন প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে নির্বাচনের পর সেই সন্ত্রাসীরাই, নতুনভাবে হামলা শুরু করে সংখ্যালঘু গ্রামগুলোতে ও তাদের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। যশোরের কেশবপুরের বিভিন্ন গ্রামে বিএনপি নেতা সাখাওয়াতের সন্ত্রাসী বাহিনী চালায় তাদের ওপর নির্যাতন। বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ঘরে হামলা চালানোর পাশাপাশি তাদের জমি কেনার ধান্দায় ঘুরে তারা সফলও হয়েছে। ইতোমধ্যেই ঐ এলাকায় অনেক সংখ্যালঘু পরিবার তাদের জমি বিক্রি করার চিন্তাভাবনা করছে। মাগুরার একটি গ্রামে বিএনপি সন্ত্রাসীরা রাতে সংখ্যালঘু মেয়েদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এক কলেজ ছাত্রী এবং দুই স্কুল ছাত্রী তাদের নির্যাতনের শিকার হয়। এ ঘটনায় বাধা দিতে গিয়ে আহত হয় প্রায় ১০ জন । পুলিশের এসপি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও শ্রীপুরের নহাটা পালপাড়ায় সংখ্যালঘু মানুষগুলোর আতঙ্ক এখনও কাটেনি। কারণ সন্ত্রাসীরা এখনও তাদের হুমকি দিচ্ছে ভারতে চলে যাবার জন্য। এসব ছাড়াও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের সংখ্যালঘুগ্রামগুলোতে নির্যাতন চলছে। তিল্লা গ্রামে মঙ্গলবার গভীর রাতে যখন হামলা চালানো হয় তখন সন্ত্রাসীরা একাধিক মহিলার শালীনতাহানি করে বলেও গ্রামবাসিরা জানায়। এ সময় তারা লুট করে লাখ লাখ টাকার মালামাল। এক কলেজ ছাত্রী সারারাত পাশের একটি বাগানে আশ্রয় নিয়ে তার জীবন বাচাঁয়। এই গ্রামের অনেক পরিবার তাদের সহায় সম্পত্তি ফেলে শহরে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জমি ও ফলের বাগানগুলো এখন বিএনপি সন্ত্রাসীদের দখলে রয়েছে। এসব তাণ্ডবের পর অনেক সংখ্যালঘু পরিবার ভারতে চলে গেছে। অনেকে ভারতে চলে যাবার অপেক্ষায় রয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় এসব হামলার খবর প্রকাশিত হলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের সন্ত্রাসীদের নিবৃত্ত করেনি বরং বলছেন এসব ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত নয়। ফলে ঐ সন্ত্রাসিরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আর প্রশাসনও গাছাড়া ভাব দেখাচ্ছে। একটি সূত্র বলেছে, বিএনপি পরিকল্পিতভাবেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করছে। উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসাবে পরিচিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা। কারণ ’৯১ ও ’৯৬ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক আসন পাবার ক্ষেত্রে তারা সহযোগিতা করে। এই এলাকার প্রায় প্রতিটি আসনেই সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে ২০ থেকে ৮০ হাজার পর্যন্ত। আগামী নির্বাচনের আগেই যাতে এদের অধিকাংশ দেশ ত্যাগ করে অথবা আওয়ামী লীগকে ভোট না দেয় সে কারণেই পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা চলছে। একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতারা যেন তাদের সাহায্য করতে না পারে সে ব্যবস্থাও করছে বিএনপি। সংখ্যালঘু এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতেও তারা হামলা করছে। যেন সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগ থেকে তাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়।
দৈনিক জনকন্ঠ, ১৩ অক্টোবর ২০০১